Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ২৮তম আসরের শেষ দিকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। আয়োজনের তৃতীয় শুক্রবারে দর্শক ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। এবার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শন ভালো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।শুক্রবার যমুনার প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা ও দর্শক সমাগম অনেক বেশি। যমুনা প্লাজার হেড অব সেলস আবদুল্লাহ আল মোরশেদ বলেন, আড়াই হাজার থেকে মো. রুবেল যমুনার প্যাভিলিয়নে এসে একটি মোটরসাইকেল কিনেছেন। তিনি জানালেন, জ্বালানি সাশ্রয়ী, দেখতে সুন্দর এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই জেনে আমি যমুনা হোন্ডা কিনেছি। এদিকে যমুনা গৃহস্থালি সামগ্রীর ক্রেতাদের ভিড় সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। গৃহিণীরা ছাড় পেয়ে পছন্দমতো কিনে নিচ্ছেন একের পর এক যমুনার পণ্য। শুক্রবার যমুনার একাধিক রেফ্রিজারেটর বিক্রি হয়েছে। এটা কেনার কারণ জানতে চাইলে রূপসী থেকে আগত শিক্ষিকা কামরুন নাহার বলেন, যমুনার ফ্রিজ টেকসই এবং মানসম্মত। আমি এ জন্যই একটি ফ্রিজ কিনেছি।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, মূল প্যাভিলিয়নের পশ্চিম পাশে জয়িতা ফাউন্ডেশনের বিশাল স্টল। উদ্যোক্তা নাছিমা আক্তার বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলার প্রথম দুই সপ্তাহে ৫০ শতাংশ বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি জয়িতার স্টলে এ বছর উদ্যোক্তার সংখ্যাও বেড়েছে।এবার বাণিজ্যমেলায় জেডিপিসি স্টলটি যে কারও নজর কাড়ছে। বাঁশ, পাটখড়ি ও ছন দিয়ে সাজানো এ স্টলে ২০ জন উদ্যোক্তা ২৮২ ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য বিক্রি করছেন। মূলত পাটপণ্যের সঙ্গে প্রাকৃতিক অন্য অনেক উপকরণ যুক্ত করে তারা এসব পণ্য তৈরি করেছেন।

মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে জেডিপিসির স্টল থেকে শোপিস কিনেছেন নারায়ণগঞ্জের রনি দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্টলে ব্যতিক্রমী অনেক পণ্য রয়েছে। সাধারণত মেলায় ছাড়ে পণ্য বিক্রি করা হয়। তবে এখানে পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে। আর স্টলের জায়গা অনেক সীমাবদ্ধ হওয়ায় দেখেশুনে পণ্য কেনার সুযোগও পাইনি।’বাণিজ্যমেলায় বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি নজর কাড়ছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও। তারা বলছেন, শুরুর দিন থেকেই তাদের স্টলে ক্রেতারা ভিড় করছেন।ছোট উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই বাণিজ্যমেলায় আলাদা স্টল নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠান ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জায়গা করে দেন।

চলতি বছর বাণিজ্যমেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) চারটি স্টল নিয়েছে। এসব স্টলে ৭৭ জন উদ্যোক্তা সরাসরি তাদের তৈরি পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও প্রায় অর্ধশত উদ্যোক্তার তৈরি পণ্যও বিক্রি হচ্ছে স্টলগুলোতে।পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনীকেন্দ্রে এ বছর এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে জায়গা পেয়েছেন ১১ জন এসএমই উদ্যোক্তা। এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে রয়েছে চামড়ার জুতা, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য, পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, আসবাব, শুকনা খাদ্যসামগ্রী ও রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান।

এসব খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় পণ্য বিক্রিতে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তারা। বিক্রির পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার অনেকেই বড় ধরনের ক্রয়াদেশও পেয়েছেন।এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান বলেন, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সারা বছরই পণ্য বিক্রি করেন। তবে মেলার মাধ্যমে বড় ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র তৈরি হয়। দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হচ্ছে।এ বছর মেলায় বিসিকের স্টলে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৪ জন উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের হয়ে স্টলে পণ্য বিক্রি করছেন বিসিকের কর্মকর্তারা। বিসিকের স্টলে শতরঞ্জি, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, জামদানি, নকশিকাঁথা, নারীদের পোশাক ও মধুসহ শতাধিক পণ্য রয়েছে।

বিসিকের বিপণন বিভাগের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ফেরদৌসী সুলতানা জানান, দিন যত যাচ্ছে, বেচাকেনা তত বাড়ছে। মেলার প্রথম দুই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয়। আর শুক্র-শনিবারে বিক্রি এক লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়।মেলায় জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নের দুই পাশে সারি করে ৩২ জন উদ্যোক্তা পণ্য বিক্রি করছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন জয়িতা বিপণন কেন্দ্রের ও ১১ জন ই-জয়িতার উদ্যোক্তা। এ ছাড়া স্টলের একপাশে থাকা জয়িতা ক্র্যাফট কর্নারে আরও কিছু প্রান্তিক উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের হয়ে এসব পণ্য বিক্রি করছেন জয়িতার কর্মীরা। পণ্যগুলোর মধ্যে নারী ও শিশুদের পোশাকই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রী, শতরঞ্জি, কুশিকাঁটার পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য, মৃৎপণ্য, বিভিন্ন ধাতব পাত্র, মিনিয়েচার ও শুকনা খাবার প্রভৃতি।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় শুধু কেনাকাটা নয়, অনেকেই আসছেন ঘুরতেও। শিশুদের জন্য আছে আলাদা জোন। এ ছাড়া পণ্যের প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্টলে রয়েছে ছবি তোলার বিশেষ আয়োজন। তবে মেলার ভেতরে থাকা খাবার হোটেলগুলোতে খাবারের দাম বেশি রাখায় সচেতন হয়ে উঠেছেন দর্শনার্থীরা। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে খাবার গ্রহণ করছেন না কেউই।মুন্সীগঞ্জের রিপন ভূঁইয়া বলেন, মেলায় খাবার যা দিচ্ছে তা দামের তুলনায় পরিমাণে কম। আবার মান নিম্ন থাকায় এখানকার খাবার খেতে আগ্রহী হইনি। তবে খাবার হোটেল ব্যবসায়ী খলিল মিয়া বলেন, মেলায় স্টল পেতে খরচ বেশি হয়েছে। তাই এখানে খাবারের দাম নিয়ে অসন্তোষ থাকা দোষের কিছু নেই। তবে এবার সরকারি ছুটির দিন ছাড়া লোক কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছি।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ /এমএম