ফারজানা নাজ শম্পা, ভিক্টরিয়া, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া কানাডা :: কানাডায় অবস্থানরত বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবেদিতপ্রাণ প্রাক্তন ছাত্র শিক্ষকগণ বিভিন্ন বর্ণিল সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক আয়োজনে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ সোনালী ঐতিহ্যের ও বাংলাদেশের দেশাত্মবোধের ধারা কে সমুন্নত রাখছেন l এই আদর্শের পরম্পরায় গত রবিবার ১ লা অক্টবোর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন এলামনাই এসোসিয়েশন কানাডার ‘ (ডুপাক ) প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হলো l আয়োজনের স্থান ছিল টরন্টোর জনপ্রিয় ‘লবঙ্গ রেস্টুরেন্ট l ‘
এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশেষ অতিথির আসনে অভিষিক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তিনজন সাবেক অধ্যাপক, কানাডার ম্যাকমাষ্টার ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ডক্টর আহমেদ শফিকুল হক, গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এবং ডক্টর শাহনাজ খান রহমান l
বর্ণাঢ্য আয়োজনটি প্রাণবন্তভাবে ও সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন চারজন ছাত্র সোহেল জামান রুমি, তৌহিদা চৌধুরী, আলমগীর কবীর এবং ইয়াসমিন রিমু। সাবেক ছাত্র হুসেইন মাহমুদ রানা ও সাবিনা সুরাইয়া ,পালু হাকিম পুনর্মিলনী ও ডুপাক গঠনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বিবরন ও বিগত দুই দশকের ছবি সম্বলিত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন সহ তথ্যবহুল এবং বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য উপস্হাপন করেন l
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৮০ -৮১ ব্যাচের সাবেক ছাত্র আব্দুল হালিম মিয়া সংক্ষেপে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং বিভাগের সকল প্রয়াত শিক্ষক মন্ডলী ও ছাত্রদের স্মরণে এবং লোক প্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী কথা সাহিত্যিক রুমানা চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করার অনুরোধ করেনর্বশক্তিমান কে নিবেদিত বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন লোক প্রশাসন বিভাগের প্রথম সেশন ১৯৭২ ব্যাচের শিক্ষার্থী জনাব মোহাম্মদ মতিন।
স্মৃতিচারণ পর্বে উপস্হিত সিনিয়র ও জুনিয়র এলামনাইদের ফেলে আসা সোনালী দিনগুলির স্মুতিচারণে অংশগ্রহণকারী সবার মাঝে হৃদয়স্পশী আবহের সৃষ্টি হয় l স্মৃতির মণিকোঠা হতে মেয়ে ছাত্রীদের কমনরুম, শিক্ষকদের অম্ল মধুর শাসন, কলা ভবনের চারতলায় বাচ্চুর ক্যান্টিন , বন্ধুদের অবিরত আড্ডা ইত্যাদি বিভিন্ন আনন্দময় মুহূর্ত ঘটনার স্মরণীয় দিক উল্লেখিত হয় l অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন কারী অতিথি এলোমনাইরা প্রায় চার দশক পরে হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীদের খুঁজে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে অনেকেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন l
কানাডায় আয়োজনটির সার্বিক সফলতা কামনা করে সুদূর অষ্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ থেকে লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর হাবিব জাফরউল্লাহ, ডক্টর কামরুল আলম ,ডক্টর নাজমুন্নেসা মাহতাব এবং ডক্টর ফিরদৌস যারীন বিশেষ বার্তা দেন l সেই বিশেষ বার্তা সমূহ পাঠ করে শোনান হোসাইন মাহমুদ রানা। একটি বিশেষ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন আব্দুল হালিম মিয়া যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল লোক প্রশাসন বিভাগের বর্তমান গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্যে মাসিক বা এককালিন বৃত্তি প্রদানের জন্য বিভাগের এন্ডুমেন্ট কমিটির কার্যকলাপ ও প্রবাসী এলামনাইদের সাহায্য প্রদানের জন্যে ডক্টর ফিরদৌস যারীনের পাঠানো ছবি ও তথ্য l
আব্দুল হালিম মিয়ার প্রস্তাবে ও উপস্হিত অতিথিদের সর্বসম্মতি ক্রমে প্রফেসর ডক্টর আহেমদ শফিকুল হককে আহবায়ক ও কানাডায় অবস্হানরত এলামনাইদেরকে সদস্য করে ডুপাকের কমিটি গঠন করা হয়। সাদার শুভ্রতা ও সবুজের সুদৃশ্য মেলবন্ধনে নকশাকৃত একটি কেক কাটেন উপস্হিত শিক্ষক ও এলামনাইবৃন্দl
আয়োজনের বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক উপস্থাপনায় আবৃত্তি করেন রওশান জাদীদ আঙ্গুর ও ইয়াসমিন রিমু। অতিথিরা মোহিত হন সুরেলা কণ্ঠে মাধুর্যে লালিত জিসান রহমান ও আলমগীর কবীর সংগীতে l কৌতুক পরিবেশনা করেন গোলাম মোস্তফা। সঞ্চালক সোহেল জামান রুমি, তৌহিদা চৌধুরী, আলমগীর কবীর ও ইয়াসমিন রিমু সমবেত কণ্ঠে চমৎকার ভাবে ব্যান্ড সংগীত পরিবেশনা করেন। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী নাহিদ কবীর কাকলীর গান পরিবেশন করার কথা থাকলেও অসুস্হতার কারণে অপারগতা প্রকাশ করেন l রে ফেল ড্রয়ের পুরুস্কার ক্রয় ও নৈশ ভোজ পরিচালনা করেন ইমাম উদ্দিন। অতিথিদের মাঝে মুস্তাফিজুর রহমান রেফেল ড্র টিকিটগুলো বিক্রির দায়িত্বভার নেন l ড্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সোহেল জামান রুমি, সাবিনা সুরাইয়া পালু হাকিম ও সালমা আহমেদ আলী। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার বিতরণ, কমেন্ট বুক ও আর্থিক ব্যবস্হাপনার সালমা আহমেদ আলী। রেজিষ্ট্রেশন ডেস্কের দায়িত্বে ছিলেন কেয়া ইসলাম ও তার সুযোগ্য কন্যা মায়েশা আলম, আব্দুল্লাহ ইমাম হারুন, সাইফুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা ও ইমাম উদ্দিন। ব্যানার ও কারিগরী ব্যবস্হাপনায় ছিলেন ইমাম উদ্দিন , পাওয়ার পয়েন্ট পরিচালনা দায়িত্বে ছিলেন এলামনাই সাবিনা সুরাইয়া পালু হাকিমের সুযোগ্যসন্তান নেহাল নাকিব। স্পষ্ট ও চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম ও ফটো ব্যবস্হাপনায় ছিলেন মামুনুর রশিদ। কথা সাহিত্যিক রুমানা চোধুরী সার্বিক নির্দেশনা দেন নেপথ্যের অবস্থান হতে l অনুষ্ঠান টি বিষয়ে প্রতিবেদনটি লেখার সময় আমাকে প্রাসঙ্গিক সবতথ্য সাহায্য দেবার জন্য আব্দুল হালিম মিয়া ভাইয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি l
কানাডার প্রবাসের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের এলামনাইদের এই স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমেসকল নিবেদিতপ্রাণ আয়োজক ও পৃষ্ঠপোষকগনদের প্ৰকৃত দেশাত্মবোধের আদর্শ এই ভাবে আগামী বজায় থাকবে তাই আমাদের প্রত্যাশা l
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ /এমএম







