Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌   জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রোববার দিবাগত রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। প্রথম দফায় মারধরের পর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে পুনরায় মারধর করা হয়।

মারধরে অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম হোসেন ও আমিনুর রহমান সুমন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের হৃদয় রায়, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শাফায়েত হোসেন তোহা, শাখা ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ও ৪৭ ব্যাচের চারুকলা বিভাগের মেহেদী হাসানসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জন। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।

এছাড়াও হলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে মারধরের সময় শাখা ছাত্রলীগের উপ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সারোয়ার শাকিল, উপ-মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক জাহিদ হাসান, সহ-সম্পাদক রিজওয়ান রাশেদ সোয়ান, ক্রীড়া বিষয়ক উপসম্পাদক ফয়জুল ইসলাম নিরব, ৪৭ ব্যাচের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের সৌরভ পাল, পরিসংখ্যান বিভাগের মীর তাওহীদুল ইসলাম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আলী আক্কাস, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাহীদ ও সীমান্তকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।

মারধরের শিকার ওই সাংবাদিক হলেন আসিফ আল মামুন। তিনি জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী এবং বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশের (ইউএনবি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।এদিকে মারধরের বিচার চেয়ে হল প্রভোস্ট বরাবর আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এছাড়াও মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্রের অনুলিপি জমা দেবেন বলে জানান তিনি।

আসিফ আল মামুন বলেন, হলের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। হলগেট থেকে কয়েকজন ছেলে হঠাৎ চোর চোর বলে একজনকে ধাওয়া করে। তারা হল-মাঠ পেরিয়ে চায়ের দোকানের দিকে আসতে থাকলে আমি মাঠের দিকে এগিয়ে যাই। এ সময় ধাওয়াকারীদের অগ্রভাগে থাকা একজন আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই মাথায় আঘাত করে বসে। এরপর অপর ধাওয়াকারীরাও আমাকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় আমি নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আরেক দফা মারধর করে। এতে আমার চশমা ভেঙে যায় এবং শার্ট ও জুতা ছিঁড়ে যায়। এ সময় সাংবাদিক মারতে পেরেছে বলে তারা গর্ব ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

মারধরের পর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আসিফের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামছুর রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাত ২টার দিকে হলের অতিথি কক্ষে ছাত্রলীগের ৪৭ ব্যাচের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে ৪৮ ও ৪৯ ব্যাচের নেতাকর্মীদের ‘গেস্টরুম’ চলছিল। এ সময় বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে সন্দেহে নেতাকর্মীরা একজনকে ধাওয়া করে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শায়েস্তা করতে গেস্টরুমে অবস্থানরতরা ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করে হলের মধ্যে উৎসুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক হল মাঠে খোঁজ নিতে গেলে গেস্টরুমের ভিডিও ধারণকারী সন্দেহে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে মারধর করে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকে উদ্দেশ্য করে ‘আপনি সাংবাদিক, গেস্টরুমের সামনে আপনি কি করেন?’ বলে জেরা করতে থাকে।

এদিকে মারধরের সংশ্লিষ্টতার বিষয় অস্বীকার করে অভিযুক্ত নাঈম হোসেন বলেন, আমি মারধরে ছিলাম না। মারধর শেষে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে সাংবাদিককে উচ্চবাচ্যে জেরা ও পরবর্তীতে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আমিনুর রহমান সুমন বলেন, আমি ছিলাম না। চোর চোর শুনে আমি দৌড়ে উপরে যাই। পরে নিচে আসার পর জানতে পারি তাকে মারধর করা হয়েছে।শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। এটা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো মারধরে সমর্থন করে না। উপযুক্ত তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন ও ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. এজহারুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমরা দেখেছি, একসঙ্গে অনেকগুলো ছাত্র গেস্টরুম থেকে বের হয়ে একজনকে ধাওয়া করেছে। তবে স্পটের কোনো ভিডিও নেই। সাংবাদিক আসিফের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা মর্মাহত। তদন্তসাপেক্ষে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২১ আগস্ট ২০২৩ /এমএম


এই বিভাগের আরও সংবাদ