Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তেই কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। হয়তো শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো যাবে।শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা ও জাতীয় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে যে নতুন শিক্ষাক্রম পাইলটিং হচ্ছে সেটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিনই নির্ধারিত আছে। আগামী বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি চালু হবে। ফলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জানুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন হওয়ার কথা।

যদিও দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন চালু আছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বর্তমান কর্মজগতের আমূল পরিবর্তন হবে। তাই কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতাই হবে পরিবর্তিত কর্মজগতে টিকে থাকার হাতিয়ার। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি তৈরি করতে এবং শিক্ষার্থীদের পরিবারকে বাড়তি শিক্ষাব্যয় থেকে রক্ষা করতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি তিন বছরের হওয়া শ্রেয়।অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মো. শাহ আলম মজুমদার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর ফারুক, পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আমান উল্লাহ খান ইউসুফজী ও সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন।

পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া : দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অব বাংলাদেশসহ (আইডিইবি) একটি অংশ বক্তব্য প্রত্যাহারে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। আরেক অংশ শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, খুবই সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

আইডিইবির সভাপতি একেএমএ হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান বলেন, শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের অর্থ সাশ্রয়ের খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে প্রচলিত ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে ৩ বছরে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক চালু করা কোর্স ৩ বছরে নামিয়ে আনার কথা বলে কারিগরি শিক্ষার প্রতি চরম অবজ্ঞা-অবহেলার পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

তারা বলেন, ওই একই সময়ে ৩ বছরের অনার্স কোর্স ৪ বছর, পাশ কোর্স ৩ বছর, ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিগ্রি কৃষি কোর্সকে ৪ বছর করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী এসব কেন ১ বছর করে কমিয়ে আনার কথা বললেন না। তারা আরও উল্লেখ করেন, শিক্ষামন্ত্রী ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে ৩ বছরে হ্রাস করার মাধ্যমে দেশের মধ্যম স্তরের প্রকৌশল শিক্ষাকে ধ্বংস করে কার স্বার্থ রক্ষা করতে চাচ্ছেন, তা জাতি জানতে চায়।

নাকি দেশের ৫ লক্ষাধিক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও সাড়ে ৪ লক্ষাধিক পলিটেকনিক ছাত্রছাত্রীদের রাজপথে নামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিব্রত করতে চান। তারা শিক্ষামন্ত্রীকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স নিয়ে ষড়যন্ত্র না করা ও তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। পৃথক বিবৃতিতে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ।

অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোক্তাদের সংগঠন টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী কারিগরি শিক্ষার্থী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মনের কথা বলেছেন।

২০০০ সালে যারা ডিপ্লোমা কোর্সকে ৪ বছর করার আন্দোলন করিয়েছেন তারা ছাত্রছাত্রীদের ভুল বুঝিয়েছিলেন এই বলে যে, কোর্স ৪ বছর হলে স্নাতক মর্যাদা পাওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা আজও হয়নি। আর কোনো বোর্ড যে এই ডিগ্রি দিতে পারে না তা পরে আন্দোলনে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেছেন। একইভাবে তখনকার সরকারকেও ভুল বোঝানো হয়েছিল বলে দাবি করেন তারা।

তারা আরও বলেন, পৃথিবীর কোথাও এই ডিগ্রি ৪ বছর নেই। তাছাড়া এখন ৪ বছর পড়ে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকের সমমর্যাদা পাচ্ছে। আবার কেউ স্নাতক হতে চাইলে আরও ৪ বছর পড়তে হচ্ছে তাকে। অন্যদিকে প্রকৌশল শিক্ষায় আগ্রহীরা দেখছে যে, সাধারণ শিক্ষায় গিয়ে ৭ বছরে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারসহ মাস্টার্স পাশ করা যায়। বরং এতে একটি বছর বেঁচে যায়।

পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয়ও হচ্ছে। সবমিলে উল্লিখিত প্রতিবন্ধকতার কারণে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। তাই শিক্ষামন্ত্রীর এ সংক্রান্ত বক্তব্য খবুই প্রাসঙ্গিক বলে আমরা মনে করি। সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে থাকবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৩ আগস্ট ২০২২ /এমএম