Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ দীর্ঘ বিরতির পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অধীর আগ্রহে থাকা লাখো শিক্ষার্থীর অপেক্ষার পালা শেষ হতে যাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো— তারা কি তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবে? অথবা তারা কি আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে?

এটি সত্য যে, যারা এইচএসসি পাস করেছে, তাদের সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে না। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৎপর হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে। তবে সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্পন্ন নয়। তাই জেনে বুঝে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পছন্দের প্রথম তালিকায় রাখে। এর কারণ হচ্ছে— ১. এখানে শিক্ষার মান বেশ ভালো। ২. ঐতিহ্যগতভাবে চাকরির ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ৩. অতি কম খরচে কিংবা বিনা বেতনে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা যায়। ৪. বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব হলগুলোতে অতিসামান্য খরচে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করে দেয়।

একজন শিক্ষার্থী উল্লিখিত কারণগুলোর জন্য যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এ বিষয়গুলো বর্তমানে কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখছে তা ভেবে দেখা দরকার।গত দুই দশকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা জ্ঞানচর্চার জন্য যথেষ্ট উপযোগী নয়। সেশনজটের কবলে পড়ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, দেশের কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস মাত্র ২৯ বছরের। তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন বর্তমান সময়ের তুলনায় অনেক কম ছিল।

যে কারণে আপনি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী হবেন তা হলো— ১. একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে কোর্স সম্পন্ন করে ডিগ্রি প্রদান ২. মেধাবী এবং বিদেশি ডিগ্রিধারী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে পাঠগ্রহণ ৩. রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ৪. সময়োপযোগী বিষয়সমূহের প্রবর্তন ও আধুনিক পাঠ্যক্রম অনুসরণ ৫. অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে সময়োপযোগী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালন ৬. বিজ্ঞানের বিষয়সমূহে অধিক ব্যবহারিক ক্লাসের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং ৭. আধুনিক উপকরণ সজ্জিত ক্লাসরুমে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম পরিচালন।

তবে উদ্বেগের বিষয় এই যে উপরোক্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তাই সতর্কতার সঙ্গেই ভর্তির এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান আরও দুটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। এক. অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াতে সাহায্য করার জন্য রয়েছে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট। শিক্ষক ও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিবিড় পরিচর্যায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও বেশ ভালো ফল করতে সক্ষম। দুই. এখানে আরও রয়েছে সুস্থধারার বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম। লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক ধরনের ক্লাবে যুক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৃহীত হতে পারে। এ ধরনের ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে, যা পেশাগত জীবনের উত্তরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

সরকারি অনুদান না থাকার কারণে ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের একটু বেশি টাকা খরচ করতে হয়। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এ ব্যয় অযৌক্তিক নয়। তা ছাড়া মেধার ভিত্তিতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে একজন শিক্ষার্থী তার উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে।

ইউজিসির ২০১৯-বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৬০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। তাই উচ্চশিক্ষার প্রসারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্ব এবং অবদান নিঃসন্দেহে কম নয়। তবে সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত শিক্ষা দিচ্ছে— এটি বলা যাবে না। আবার কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ক্ষেত্রে কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অধিক ভালো করছে— এটিও সত্য।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৮ নভেম্বর  ২০২১ /এমএম