Menu

আহসান রাজীব বুলবুল, কানাডা :: আগামী ২০ জুলাই ২০১৯ নটনন্দন থিয়েটার, ক্যালগেরি মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছে তাঁদের দ্বিতীয় প্রযোজনা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর রচিত ও মাহমুদুল ইসলাম সেলিম নির্দেশিত নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’। চার দশকের প্রযোজনা সমূহের মধ্যে ঢাকার মঞ্চের এ পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় নাটক দেওয়ান গাজীর কিসসা কেন নটনন্দন তাঁদের দ্বিতীয় প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে আনতে যাচ্ছেন সে প্রসঙ্গ নিয়েই কথা হয় নাটকটির নির্দেশকের সাথে বাংলানিউজ সিএ ডটকমের।

গোঁড়ার কথা : জানুয়ারি ১, ২০১৫ কানাডার ক্যালগেরি শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা থিয়েটার নটনন্দন। প্রতিষ্ঠাতা নাট্যব্যক্তিত্ব মাহমুদুল ইসলাম সেলিম। থিয়েটারের সাথে মাহমুদুল ইসলাম সেলিমের সম্পর্ক দীর্ঘ ২৮ বছরের। সেই ১৯৯০ সালে নাট্যজন আলী যাকেরের হাত ধরে যুক্ত হন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়-এ। তারপর ৫ বছর এই দলে কাজ করার পর ১৯৯৫ সালে নাট্যজন ডঃ ইনামুল হক ও লাকী ইনামের সাথে প্রতিষ্ঠা করেন নাগরিক নাট্যাঙ্গন। ২০১৩ সালে কানাডা অভিবাসী হবার আগ পর্যন্ত নাগরিক নাট্যাঙ্গনের সাথেই তিনি যুক্ত ছিলেন। নাট্যদলে যুক্ত থেকে একাধারে নাটক রচনা, নাট্যনির্দেশনা ও অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চের পেছনের কাজ যেমন আলোক পরিকল্পনা, মঞ্চ পরিকল্পনা, নাট্য পত্রিকা সম্পাদনার কাজও তিনি বেশ পারঙ্গমতার সাথে করেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তাঁর রচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ এখনও ঢাকার মঞ্চে বেশ সফল ভাবে মঞ্চস্থ হচ্ছে। দেশে থাকাকালীন মঞ্চ ছাড়াও মাহমুদুল ইসলাম সেলিম রেডিও ও টেলিভিশনের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। ২০১৩ সালে দেশের পাঠ চুকিয়ে কানাডার অভিবাসী হয়ে আলবার্টা প্রভিন্সের ক্যালগেরি শহরে বসবাস শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল কম্যুনিটির উৎসাহী মানুষগুলোকে নিয়ে শুরু করবেন বাংলা থিয়েটারের কাজ। গোছাতে গোছাতে সময় লেগে গেল প্রায় ২ বছর। এরপর থিয়েটারে তাঁর ২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে ২০১৫র জানুয়ারির ১ তারিখে ক্যালগেরিতে প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলা থিয়েটার ‘নটনন্দন থিয়েটার, ক্যালগেরি।

উদ্দেশ্য : কানাডা একটি ‘মাল্টি-কালচারাল কান্ট্রি’। বিশ্বের বহু দেশ থেকে বহু ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষ অভিবাসী হয়ে এসেছেন এখানে। যদিও সরকারী ভাষা দুটি, ইংরেজি ও ফরাসী; তারপরও সব ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে এঁরা তাদের নিজের সংস্কৃতিকে লালন করতে বেশ উৎসাহ দিয়ে থাকে। সে জন্য কানাডার জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের বাইরে সমস্ত জনগোষ্ঠী তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে উৎসব আয়োজন প্রায় নিয়মিত ভাবে করে থাকে। কিছু কিছু জাতীয় অনুষ্ঠানে ( স্টামপীড, ওয়ার্ল্ড ফেস্ট ইত্যাদি) মানুষ রীতিমত তাঁদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। তাই এখানে সুযোগ আছে বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেয়া। আর সে থেকেই বাংলা থিয়েটার নটনন্দনের ভাবনা। এ ক্ষেত্রে মাহমুদুল ইসলাম সেলিমের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, তিনি বলেন- “বাংলাদেশ থাকতে দেখেছি আমরা শেক্সপীয়র, ব্রেশট, ইবসেন, মলিয়ের, প্রিস্টলী, ওনীলসহ আরও অনেক বিদেশী নাট্যকারদের নাটক ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে মঞ্চে এনেছি, বিশ্ব নাট্যধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য। এখন স্থায়ী ভাবে বিদেশে বসবাস করে করতে এসে কেন নয় আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক বা মামুনুর রশিদের নাটক ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে করবো না? অথবা বাংলা নাটক বাঙালিদের জন্য করবো না? এ ভাবেই ক্রমে ক্রমে আমরা কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে পারি। আর এটাই হল নটনন্দনের আসল উদ্দেশ্য।”

প্রথম প্রযোজনা কেন খোলস অথবা দ্বিতীয় প্রযোজনাইবা কেন দেওয়ান গাজীর কিসসা?
তাহলে প্রশ্ন হল নটনন্দনের প্রথম প্রযোজনা ‘খোলস’ কেন? অথবা দ্বিতীয় প্রযোজনা দেওয়ান গাজীর কিসসা’ই বা কেন? দুটি নাটকই তো বিদেশী নাট্যকারের নাটক থেকে রূপান্তর! প্রথমটি জে বি প্রিস্টলীর ‘অ্যান ইন্সপেক্টর কলস’ এবং দ্বিতীয়টি বিখ্যাত জার্মান নাট্যকার বেরটল্ট ব্রেশট এর ‘মি. পুন্টিলা এন্ড হিজ ম্যান মাটটি’ থেকে রূপান্তর। উত্তরে সেলিম বললেন, এ দুটি নাটকই হচ্ছে রূপান্তর, আর সেই রূপান্তর যদি দেশজ ভাবধারায় নবরসের সঞ্চার করে তো সেখানেই নাট্যকারের মৌলিকত্ব! সে বিবেচনায় নাটকদুটি লাকী ইনাম ও আসাদুজ্জামান নূরের একান্তই মৌলিক নাট্যরচনা বলা চলে! যেভাবে জন গের “বেগার্স অপেরা” বেরটল্ট ব্রেশটের হাত ঘুরে হয়ে যায় “থ্রি পেনি অপেরা”!!! তাছাড়া আমরা আমাদের নাটকে দেশজ আঙ্গিকে দেওয়ান গাজিকেই উপস্থাপন করতে যাচ্ছি, কোন ভাবেই মি. পুন্টিলাকে নয়। তিনি আরও বলেন“আসলে সত্যি কথা বলতে কি, এই নাটকদুটির সাথে আমার ভীষণ রকম ব্যাক্তিগত ইমোশন জড়িয়ে আছে। ৮০’র দশকের শেষ দিকে এসে প্রবাদ প্রতিম অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের এই ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ দেখেই আমি মঞ্চ নাটকের প্রতি প্রথম অনুরক্ত হয়ে পরি এবং ১৯৯৫ সালে ‘খোলস’ নাটকে অভিনয় দিয়েই মূলতঃ আমার নিরবচ্ছিন্ন মঞ্চযাত্রা শুরু। সেই হিসেবে এ দুটি প্রযোজনাই আমার কাছে গুরুদক্ষিণা বলতে চলে। তবে পরের প্রযোজনা হিসেবে অবশ্যই থাকবে কোন একজন বাঙালি নাট্যকারএর একান্তই মৌলিক নাটক বললেন তিনি।

বাঙ্গালিদের প্রতিক্রিয়া অথবা সাড়া
শুধু এখনে নয় প্রবাসের প্রতিটি শহরে বসবাসকারী বাঙালিরা ছোট ছোট আঙ্গিকে নিজেদের মধ্যে নানান অনুষ্ঠান সারা বছর ধরেই করে থাকে। কখনও কখনও বড় বড় শহরগুলোতে সবাই সম্মিলিত ভাবে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, তবে তাও হয়ে থাকে নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। নটনন্দনের ভাবনা একটু ভিন্ন। নটনন্দন চায় যেমন কমিউনিটির ভিতরে তার নাট্যচর্চা চালিয়ে যেতে, ঠিক তেমনি কমিউনিটির বাইরে গিয়ে এখানকার মেইন স্ট্রিম থিয়েটারে তার অবস্থান জানান দিতেও চায়। ভাবনাটা এখানে একেবারেই নতুন, তাই সবাইকে বুঝিয়ে ঐ পর্যন্ত যেতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া সংস্কৃতির মাধ্যম হিসেবে শুধু নাটকও একটি নতুন ভাবনা এখানে, তবে মানুষের সাড়া আমাদের ভীষণভাবে উৎসাহিত করছে।

কেমন হবে নাটক বা কতটা আশাবাদী?
‘বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়’ নটনন্দনের অবস্থাও ঠিক তাই। জুলাই ২০ তারিখ ২০১৯ ওয়াইএমসি এর বিএমও থিয়েটারেই বোঝা যাবে আমাদের সকল হম্বি তম্বি, বললেন সেলিম। তবে একঝাক তরুণ তরুণীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি ভীষণ রকমআশাবাদী। তিনিসহ এই নাটকে অভিনয় করছেন আহমেদ আল ইমরান নিক্কন, ফারজানা সোমা, সালেহা আশরাফ কান্তা, গোলাম তাঞ্জিম অনিক, শুভাশিস চক্রবর্তী, পাপ্লু পাল, শর্মিলা নন্দী, বিনীতা মৌ দত্ত, জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, অনামিকা পাল পূজা, আরাফাত আহমেদ বাপ্পি, ইকবাল কবির, তুরিন চৌধুরী, সঞ্জয় দেব রায়, শুভ্র দাস শুভ ও লাভলী বেগম। আলোক পরিকল্পনায় সুরঞ্জিত চন্দ, মঞ্চ পরিকল্পনা, অভিনয় এবং নাটকটির নির্দেশনায় আছেন নাট্যজন মাহমুদুল ইসলাম সেলিম। সবার উপস্থিতিতে নটনন্দনের দ্বিতীয় প্রযোজনা বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর রচিত ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ এর প্রথম মঞ্চায়ন সফল হোক, এই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/২৬ জুন ২০১৯/ইএন


এই বিভাগের আরও সংবাদ