Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের পরিসংখ্যান দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। কিন্তু সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয় না। ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকি, মামলা-মোকদ্দমা, মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনে জখম থেকে শুরু করে গুম কিংবা খুন নির্যাতনের এমন কোনো ধরন নেই যার শিকার হচ্ছেন না সাংবাদিকরা।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর কিংবা মফস্বল সর্বত্রই চলছে এই নির্যাতন। স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা বা সদস্য সবার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে তুলে নিয়ে নির্যাতন থেকে শুরু করে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে মারধরের শিকার হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা।

কিন্তু দেশে একের পর এক সাংবাদিক হত্যা আর নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার নেই। হত্যা ও নির্যাতনের অগুনতি মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে, বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। বিচার না করায় দেশে এখন সাংবাদিক নির্যাতন নিত্যকার বিষয় হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি দেশে সাংবাদিকদের তৈরি করা প্রতিবেদনে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা, মামলার পর আটকের মত ঘটনা ঘটেছে বেশকিছু। কেউ কেউ আটকের পর ছাড়া পেয়েছেন। কেউবা এখনো জীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সম্পতি ঘটে যাও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলি-

চলতি বছরের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। সেখানে প্রায় ছয় ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর তাঁকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়। সে রাতেই মামলা দেখিয়ে পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। রোজিনা ইসলামকে আটক, নির্যাতন, মামলা ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় দেশের সাংবাদিক সমাজ সরব হয়। তাঁর মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর ওপর নির্যাতনকারীদের বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেছেন। গত ২৩ মে রোজিনা ইসলামের জামিন হয়। ২৩ মে বিকেলেই গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। এরপর তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। শেষমেষ ৫০ দিন পর প্রিয় কর্মস্থলে ফিরলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম।

– ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ করায় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. নাদিরুল আজিজ (চপল)। এ মামলায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি তানভির হাসান তানুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তানুকে রোববার ভার্চুয়াল আদালতে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দিয়েছেন আদালত।

– হবিগঞ্জের বাহুবলের করাঙ্গী নদীর ব্রিজ ও রাস্তা মেরামত কাজে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের হাতে হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। পরে সাংবাদিককে আটক করে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা দেয়া হয়েছে। ২৬ জুন (শুক্রবার) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়।

– লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ৬ দিনের ব্যবধানে দুই জন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১১ জুলাই) ওই উপজেলার বড়খাতা এলাকায় সেলিম সম্রাট নামে এক সাংবাদিক হামলার শিকার হন। এর আগে গত মঙ্গলবার আনন্দ টেলিভিশনের সাংবাদিক রকিবুল হাসান রিপনও হামলার শিকার হন।

– ঝিনাইদহে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এক পুলিশের হাতে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও মিরাজ জামান রাজ নামের দুই সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সময় পুলিশ তাদের ব্যবহার করা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। রোববার (৪ জুলাই) ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই মোড়ে ঘটনাটি ঘটে।

উপরোক্ত ঘটনাগুলো চোখে টনক নাড়ানো মতো। শুধু কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। রাজধানীসহ মফস্বলেও সমান ভাবে সাংবাদিক নির্যাতিত, লাঞ্ছিত হচ্ছে। শুধু এতেই ক্ষ্রান্ত নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমন আশঙ্কা আইনটি তৈরির সময়ই করেছিল সাংবাদিক সমাজ। এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশঙ্কার চেয়েও আরও কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

সাংবাদিকরা দেশের সব ধরনের দুর্যোগ-সংকটে সামনের সারিতে থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। তা সে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমবেশ যাই হোক এটাই পেশাগত দায়িত্ব সাংবাদিকের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দায়িত্বপালনকালেই সাংবাদিকরা মারাত্মক হামলার শিকার হচ্ছেন। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বপালনের কারণেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। এমন হামলা যেমন আলোকচিত্র সাংবাদিকদের ওপর হচ্ছে তেমনি প্রতিবেদকদের ওপরও হচ্ছে। তবে কি ধরেই নিবো স্বাধীন, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার দিন কি শেষ হয়ে গেলো?

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১২ জুলাই ২০২১ /এমএম

 


এই বিভাগের আরও সংবাদ