আহসান রাজীব বুলবুল, প্রধান সম্পাদক, প্রবাস বাংলা ভয়েস :: শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমণ্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলা এবং সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদীদের উস্কানিমূলক কথাবার্তায় কানাডার প্রবাসী বাঙালিরা ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
কানাডার স্থানীয় গণমাধ্যম “প্রবাস বাংলা ভয়েস” এর প্রধান সম্পাদক ও প্রবাসী সাংবাদিক আহসান রাজীব বুলবুল এর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন টরোন্টোর “নতুন দেশ” পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির, প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক, প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম রিপন,ব্যবসায়ী রুপক দত্ত, ব্যবসায়ী কিরন বনিক শংকর, এবং সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান ।
বক্তারা বলেন- বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক কুষ্টিয়ায় রাতের অন্ধকারে জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙ্গা বিজয়ের এই মাসে অত্যন্ত দুঃখজনক, দেশের গণতন্ত্রের উপরে চরম আঘাত যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই হায়েনাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রবাসে থেকেও সোচ্চার, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
টরোন্টোর “নতুন দেশ” পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন- ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহারকারী কয়েকটি সংগঠনের নেতারা ভাস্কর্য বিরোধীতার নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লড়াইয়ে নেমেছে। এই দু:সাহসকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন–বাংলাদেশের ভাস্কর্য যেমন হঠাৎ করে আবিষ্কৃত হয়নি, ইসলাম ধর্মও সেখানে নতুন যায় নি। সারা বাংলাদেশের যখন অর্থপাচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠা শুরু হয়েছে সেই সময় এই গ্রুপটি কৌশলে ভাস্কর্য বিতর্ক সামনে এনে অর্তপাচারের আলোচনাটাকে ধামাচাপা দিয়ে ফেলার পরিবেশ তৈরি করেছে।অর্থপাচারকারী দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে ইসলামকে ব্যবহার করে তারা ভাস্কর্য বিরোধী আন্দোলনে নেমেছে কী না সেটি ভেবে দেখা দরকার।
প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন–মৌলবাদের বিষ দাঁত ভেঙে দিতে এখনই সবার ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভাস্কর্য ভাঙার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বলেন– বঙ্গবন্ধুর অবমাননা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না, যারা যে উদ্দেশ্যে নিয়েই সমাজে অস্থিরতা এবং অপচেষ্টা চালানোর চেষ্টা করুক না কেন তা কোনো ভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না। দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।
প্রকৌশলী আবদুল্লা রফিক বলেন- আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। মৌলবাদীদের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীর বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি ধ্বংসের যে পাঁয়তারা করছে তার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার।
ব্যবসায়ী রুপক দত্ত বলেন–বিজয়ের এই মাসে এই ঘৃণ্য অপকর্মের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় এনে বিচার করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
ব্যবসায়ী কিরন বনিক শংকর বলেন–বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বাংলাদেশে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা এই সভ্যতার যুগে দাঁড়িয়ে কেবল হতাশাই নয় বরং উৎকন্ঠার ও কারন বটে।এই অশুভ শক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে এবং তা অনতিবিলম্বে । আর তা না হলে বাংলাদেশের উন্নতির এই অগ্রযাত্রার চাকা থেমে যাবে ।বাংলাদেশ পরিনত হবে আর এক আফগানিস্তানে।
উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান বলেন – মোমিনুল হক আর বাবুনগরী কিসের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে তা অনুধাবন করতে দেরী হলে দেশকে তার সীমাহীন মূল্য দিতে হবে। ভাস্কর্য আর মুর্তি এক নয়, এমন নরম কথা বলে প্রকারান্তরে নীতি নির্ধারকদের কেউ কেউ যে অভিমত রাখছেন তাতে সাম্প্রদায়িকতাকেই সমর্থন করা হচ্ছে।
আজ কুষ্টিয়ায় জাতির জনকের ভাস্কর্য কে ভেঙে ফেলা হয়েছে, কাল হয়তো অপরাজেয় বাংলা কে ভেঙে ফেলা হবে, ভবিষ্যতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর প্রাণের শহীদ মিনার উপড়ে ফেলার ঘোষণা আসার আগেই কঠোর হস্তে এই দানবীয় শক্তি কে মোকাবেলা করতে হবে, অন্যতায় বিপন্ন হবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৬ ডিসেম্বর ২০২০/এমএম





