ইঞ্জিনিয়ার জয়দীপ সান্যাল, ক্যালগেরি, কানাডা :: স্বস্তি পেলাম অক্সফোর্ড-ভ্যাক্সিনের তৃতীয় দফার ট্রায়াল আবার শুরু হচ্ছে জেনে । একই সাথে জোর কদমে এগিয়ে চলেছে চীনের সিনোভাস ভ্যাক্সিন পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায় ব্রাজিল সহ অন্যান্য দেশে । তৃতীয় ট্রায়াল ছাড়াই রাশিয়া ইতিমধ্যে দেশব্যাপী সরাসরি ভ্যাক্সিনেশন শুরু করেছে। এর বিশেষ কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলে নিশ্চই বিশ্ব মিডিয়ায় আসবে আসন্ন শীতের আগেই। তবে কতটা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ সংবাদ সেটা হবে জানিনা । আমেরিকার মডারনা ও চীনের আরও দুটো ভ্যাক্সিন তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষাধীন কিন্তু প্রচারে বেশ পিছিয়ে। এখন পর্যন্ত প্রথম তিনটে ভ্যাক্সিনের অগ্রগতিতে যথেষ্ট আশাবাদী।
হতাশা আমার অন্যখানে। শরৎ চন্দ্রের ভাষায় লিখতে হল, করোনা তাড়াবে ভ্যাক্সিন, কিন্তু ভ্যাক্সিন সারাবে কে? রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা এখন ভর করেছে ভ্যাক্সিনের উপর। কূটনীতি হলে তেমন ক্ষতি নেই, যদি সেটা সম্প্রসারণবাদী না হয়। বাণিজ্যের সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে, আগ্রাসী না হলে। মন খারাপ হয় ফেসবুকে চেনা-জানা মেধাবী জনের মন্তব্যে, আর বাংলা-ইংরেজি পত্রিকায় বেশ কিছু পেশাজীবীর কলামে, যাঁদের অনেকের কাছে এমনটা আশা করিনি।
বিস্মিত হয়েছি কারো কারো মন্তব্যেঃ অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিন বিলম্বিত হলে ক্ষতি নাই, ট্র্যাম্পের হার তো হবে নিশ্চিত। এর উপর আছে ইসলাম-ফোবিয়ার ব্যবহার, ট্রাম্পের পক্ষে-বিপক্ষে দুভাবে। প্রায় সব লেখায়, মন্তব্যে তেমন গুরুত্ব নেই বেকারত্বের হার, অর্থনৈতিক সূচক, পররাষ্ট্র নীতি, আউট সোর্স বনাম ইনসোর্স, অস্ত্র বনাম হাইটেক ব্যাবসার অবস্থানের। কেউ কেউ অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিনের যেকোনো ব্যর্থতার খবরে পুলকিত হন,কারণ এর উৎপাদন হবে ভারতে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে কেউ মনে করেন বাংলাদেশ করোনা ভ্যাক্সিনে ভারতের কব্জায় বন্দী হয়ে গেল। উইঘুর সম্প্রদায়ের উপর চীনের অনাচার নিয়ে তাঁদের লেখনিতে সেই ধার কিন্তু দেখিনা । ওদিকে আবার চীনের ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে পরীক্ষার অনুমতি কারো কারো ভারী অপছন্দের, মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ব্লকে যোগ দেওয়া হয়ে গেল । কেউ আবার বিষয়টা নিয়ে আরও কিছু কাল যাবরকাটা্র পথ বন্ধ হল বলে যারপরনাই দুঃখিত। আমারতো মনে হয় বাংলাদেশ এখন সুবিধা জনক অবস্থানে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত চীন ও ভারতের সহযোগিতায় নামমাত্র মূল্যে ভ্যাক্সিন যোগারের অগ্রভাগে থাকতে পারে কিনা।
কর্তৃত্ববাদী, একনায়ক পুতিনের সমালোচনা চলতেই পারে। ভ্যাক্সিন পরীক্ষায় স্বচ্ছতার অভাব আছে সেখানেও। তবে মহাকাশ, ও স্বাস্থ্য গবেষণায় রাশান বিজ্ঞানীদের সাফল্য প্রমানিত । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভুমিকাও নিরপেক্ষ নয় । আস্থায় নেই তারা রাশিয়ার মত ইউরোপ ও আমেরিকার। রাশিয়ান ভ্যাক্সিনকে নাক না শিটকে বরং দরকার সেখানে চলমান ভ্যাক্সিনেসনের ফলাফল নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব বাজার জাতের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে পূর্ব ইউরোপ আর জোটনিরপেক্ষ দেশগুলো এগিয়ে আসলে রাশিয়ার দিক থেকে তেমন বাধা আসবে বলে মনে হয়না। বাণিজ্যের সুযোগ পুতিন নিশ্চয়ই হারাতে চাইবেননা তখন।
অগ্রসর সব ভ্যাক্সিনের একসাথে সাফল্য আসুক এ-কামনা করি । সেই সাথে দেখতে চাই সুশৃঙ্খল, সুলভ, দক্ষ বিতরণ ব্যবস্থা। নইলে কর্পোরেট মনোপলির বলির পাঁঠা হবে সব উন্নয়নশীল দেশ ও বিশ্বের অস্বচ্ছল জনগোষ্ঠী। বিশ্ব মন্দা থেকে উত্তরণে কার্যকরী ভ্যাক্সিন আসতেই হবে এবছরের মধ্যে। দ্রুততম ভ্যাক্সিনের রেকর্ড হয়ে যাবে তখন-ই। বিশ্ব মানবের জয় হবেই হবে, দানব করোনার বিরুদ্ধে।
লেখক: ইঞ্জিনিয়ার জয়দীপ সান্যাল,
ক্যানাডিয়ান ন্যাচারাল রিসোর্সেস (সিএন আর এন) লিঃ
ক্যালগেরি, কানাডা।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০/এমএম






