Menu

আহসান রাজীব বুলবুল, প্রধান সম্পাদক, বাংলা নিউজ :: ফাগুনের ঝিরঝির বাতাসে কোকিলের মিষ্টি কুহুতানে প্রকৃতি যখন উন্মাতাল, তখন কানাডার চিত্র পুরোপুরিই ভিন্ন। বছরে প্রায় আট মাস কানাডা বরফে আচ্ছাদিত থাকলেও ভালোবাসার রং, আড্ডার রং, লোকজ ভাবনা বাংলার ঐতিহ্য ভালোবাসা বিনিময়ের বসন্ত যখন বাঙালি হদয়ে ভর করে তখনই বাঁধ সাধে বৈশ্বিক মহামারী ঘাতক “করোনা”।

প্রবাসী জীবনের আনন্দ জয়গান আর পবিত্র ঈদুল ফিতর এবার পালন হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ভিডিও কনফারেন্স এর মধ্য দিয়ে।বাঙালি হৃদয়ে আবহমান উৎসব যেন বৈশ্বিক মহামারীর কাছে দিনদিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। হৃদয়ের আবহে যে উৎসব, যে আনন্দ, যে উপলক্ষ্য তা আজ নিষ্ক্রিয়, অদৃশ্য এক ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে। অপ্রতিরোধ্য এ ভাইরাস বিশ্ববাসীকে স্থবির করে দিয়েছে। প্রবাসী জীবনে চিরাচরিত আড্ডা আর মিলনমেলার যে প্রভাব এ বছর তা আর পরিলক্ষিত হচ্ছে না। লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাঙালিরা ঘরে বসে বসেই দিন গুণছে এইতো সুদিন আসবে, নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত দিকে চলছে। পরিস্থিতি তা বলছে না।

এই মুহূর্তে কানাডায় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে দেশটিতে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। তবে একথা নিশ্চিত বলা যায় কানাডাবাসী যতটা পারছে মেনে চলছে নিয়মকানুন আর সামাজিক দূরত্ব। তার প্রমাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ রমজান মাসে ঘরে বসেই তারাবীহ নামায আদায় করছে। কোথাও যাওয়া থেকে বিরত থেকেই ঘরে বসেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ইফতারি আয়োজন করছে। আর কানাডা সরকার ও মুসলিম সম্প্রদায়ের এসব দিক চিন্তা করে কানাডার চারটি সিটিতে প্রকাশ্যে মাগরিবের আযান দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আর তা সম্ভব হয়েছে সামগ্রিক দিক বিচার বিবেচনা করেই।সরকারের দেয়া বিধি-নিষেধ, সামাজিক দূরত্ব আর ঘরে বসে থাকলেও বাঙালির চিরাচরিত ঈদুল ফিতরের উৎসব যেন মনের গহীনে ধাবিওমান। অপেক্ষা শুধু প্রতিষেধক ভ্যাকসিন অথবা প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক কিছু সহজ করে দিচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করছে অনলাইনে। থাকছে বাহারি রকমের মহিলাদের শাড়ি, চুড়ি, কানের দুল সহ সাজগোজের নানা রকমের সরঞ্জাম।

পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি আর ছোট ছোট শিশুদের জামা কাপড়। দোকানের পসরা সাজিয়ে মেলায় না যেতে পারলেও অনলাইনে কেনাকাটা চলছে হরহামেশাই। এবারের আসন্ন ঈদুল ফিতরে অনলাইনে কেনাকাটায় কানাডা এখন জমজমাট। বাহারি রঙের শাড়ি কাপড়ে শিশু সহ-মধ্যবয়সী সবাই মডেল সেজে পরিবেশন করছে তাদের বিভিন্ন পণ্যর সমাহার। অনলাইনের মাধ্যমে চলছে জমজমাট ব্যবসা। বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে ডেলিভারি। আর এসব পুরোপুরি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেই করা হচ্ছে।বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি মো. রশিদ রিপন জানালেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল এবং সামাজিক মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই মুহূর্তে কেনাকাটার চাইতে এই মহামারী কে কিভাবে অতিক্রম করব এটাই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

 

ক্যালগেরির “বারাকা এ্যপায়ারেল” এর স্বত্বাধিকারী আরিফা রব্বানি জানালেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচাকেনা তেমন নেই। তবে অনলাইনে প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি, নিয়মিত খরিদ্দারদের পাশাপাশি নতুন খরিদ্দাররাও অর্ডার দিচ্ছে। সবই সম্ভব হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকার ও তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন।ডা. সায়মা মাওলা জানালেন, যে কোন কিছুর চাইতে স্বাস্থ্য সচেতনতাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে ঘরে বসে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই উত্তম। পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই আমরা ঈদ করব। বাচ্চাদের জন্য কিছুু অনলাইনে অর্ডার করেছি।

ক্যালগেরির নারী সংগঠক লুবনা জাহান জানালেন, এই মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকলে ঈদ অনেক আসবে, কিন্তু সময়টাকে আমাদের অনুধাবন করতে হবে। অনলাইনে কেনাকাটার অর্ডার দিয়েছি। ঘরে বসেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এবার ঈদ করব ইনশাআল্লাহ।ক্যালগেরির নিয়মিত ক্রেতা মনিরা বেগম শম্পা জানালেন, সামনাসামনি না দেখতে পেলেও ভার্চুয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে এবার আমরা ঈদের জামা কাপড় কিনেছি।

তবে বাস্তবে কেনার যে আনন্দ তা ভীষণভাবে মিস করছি। কোথাও না যেয়ে ঘরে বসেই ঈদ পালন করব এমনটাই আমাদের পরিকল্পনা।দূর প্রবাসে বাঙালির জীবনে এই ঈদ উৎসব যেন মা মাটি আর দেশকেই মনে করিয়ে দেয়। বৈশ্বিক মহামারী খুব দ্রুত সেরে উঠবে, সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে,এমনটাই প্রত্যাশা কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৭ মে ২০২০/এমএম


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ