Menu

প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক :: কনস্পিরেসি থিওরি (conspiracy theory) বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সারা পৃথিবীতে বহুল পরিচিত l যেকোনো ঘটনা ঘটার পর থেকে সত্য উদঘাটন হওয়া পর্যন্ত কিছু মানুষ ওই ঘটনা সম্পর্কে অনুমান নির্ভর তথ্য প্রচার করে এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম দেয় l আর এটা ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত দুই ভাবেই প্রচারিত হতে থাকে l উন্নত বিশ্বে এর বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগে অনেখানি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে l কিন্তূ বেশী ডাল পালা গজায় যেসব দেশে “মিথ্যে খবর” প্রকাশে আইনের খুব একটা প্রয়োগ দেখা যায় না ! আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ডাল পালা গজাতে বেশী সময় লাগে না l কিছু মানুষ মজা করেও এই তত্ত্বের জন্ম দিয়ে থাকে, আবার ইদানিং দেখা যায় এক দেশে বসবাস করে অন্য দেশ সম্বন্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের (theory of conspiracy) জন্ম দিয়েই চলেছে কারণ ওই দেশের আইন তার দেশে প্রয়োগের সম্ভাবনা নেই l

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর মহামারী আকারে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে l বর্তমান পরিসংখ্যানে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় উন্নত বিশ্বের দেশগুলো l পৃথিবীতে অর্থনৈতিক এবং পরাশক্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ “আমেরিকা” করোনার দ্বারা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় আছে lআর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই চীনের উহানের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের ল্যাব (Wuhan Institue of Virology) থেকে ভুলক্রমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এক বক্তব্য দিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের খেলোয়াড়দের খোরাক যোগান দেয়, এবং বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (WHO) কে চীনের তথ্য গোপন করায় সহায়তা করা এবং সময় মতো করোনার তথ্য প্রকাশ না করার অপরাধে দায়ী করে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থাকে অর্থ সাহায্য বন্ধ ঘোষণা করে যদিও বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (WHO) শুরু থেকেই তাদের উপর চাপানো দোষ অস্বীকার করে আসছে l

এফবিআই (FBI) হার্ভার্ড (Harvard) প্রফেসর ডঃ চার্লস লিবার ও দুজন চীনের নাগরিক কে গ্রেফতার করে তখন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ডাল পালা গজিয়ে যায় যে এই গ্রেফতার করোনা ভাইরাস এর সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত l এখন সত্য ঘটনা কি ছিল অনুসন্ধান করা যাক- ডঃ চার্লস হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি এবং কেমিকাল বায়োলজি ডিপার্টমেন্টে এর হেড ছিলেন l প্রফেসর এবং তার রিসার্চ টিম ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) এবং ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স (DOD) থেকে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসাবে নেয় এই অনুদানের শর্ত ছিল যেকোনো ধরণের বিদেশী ফান্ড গ্রহণ করলে তা ডিক্লেয়ার করতে হবে l কিন্তূ ডঃ চার্লস ২০১১ সাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতসারে উহান ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি(WUT) তে “কৌশলগত বিজ্ঞানী” হিসাবে চীনের ”থাউজেন্ড ট্যালেন্ট প্ল্যান” এ কন্ট্রাক্ট সাইন করেন l ২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চালু ছিলl বিনিময়ে চীন সরকার তাকে মাসে পঞ্চাশ হাজার ডলার ছাড়াও আরও অনেক ভাতা প্রদান করেছে l চীন সরকারের এই প্রজেক্ট মূলতঃ তরুণদের মধ্যে থেকে ট্যালেন্ট হান্ট করে রাষ্ট্রীয় কাজে লাগানো l মূলতঃ এই তথ্য গোপন করার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয় যার সাথে করোনা ভাইরাস এর কোনো সম্পর্ক ছিল না l

ঐদিন এফ বি আই (FBI) ভিসা জালিয়াতি অর্থাৎ ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা নেওয়ার অপরাধে ইয়াংকিং ওয়াই নামে এক চীনের মহিলার বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় l ওই মহিলা মূলতঃ চীনের সেনা বাহিনীর অফিসার ছিল এবং আমেরিকায় স্পাই হিসাবে কাজ করছিলো সেই মহিলা এখন চিনেই অবস্থান করছে lএর সাথে করোনা ভাইরাস এর কোন সম্পর্ক নেই lজাওসং জেঙ নামে আরেক চীনের নাগরিক কে বোস্টন লোগান এয়ারপোর্ট থেকে এফ বি এই (FBI) গ্রেফতার করে l সে বোস্টনের ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এক বছরের কন্ট্রাক্ট এ এসেছিলো এবং যাওয়ার সময় চুরি করে ক্যান্সার এর ২১ ভয়াল চীনে নিয়ে যাচ্ছিলো l সুতরাং এর সাথেও করোনা ভাইরাস এর কোনো সম্পর্ক ছিল না l

এবার দেখা যায় এক ফ্রেঞ্চ ওয়েবসাইট “ রাবিট শিপ” এ 5G ইন্টারনেট এবং করোনা ভাইরাস এর মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয় l 5G ইন্টারনেট এ যেহেতু মিলিমিটার ওয়েভ স্পেকট্রাম ব্যবহার করা হয় সুতরাং করোনা ভাইরাস আক্রান্ত অসুখ এর এর মিল আছে l এক বেলজিয়াম ডাক্তারও চীনের উহান শহরে যে 5G ইন্টারনেট টাওয়ার স্থাপন করা হয় তার সাথে করোনা ভাইরাস এর মিল আছে বলে মনে করে ছিল l আবার কেউ কেউ ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অংশ হিসাবে এগুলোকে পৃথিবীতে মানব সংখ্যা কমানোর চেষ্টা হিসাবে মনে করে এবং এগুলোকে ভিত্তি করে শত শত নিউজ, ভিডিও ভাইরাল হয়েছে l তবে বৈজ্ঞানিকরা এখন পর্যন্ত ৫জি ইন্টারনেট এবং করোনা ভাইরাস এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক খুঁজে পায়নি l

২০০৮ সালে ফ্রেঞ্চ ভাইরোলজিস্ট “জনাব মনটাগানির” এইচ আই ভি (HIV) ভাইরাস আবিষ্কারে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পায় l তিনি হঠাৎ করে এক ফ্রেঞ্চ টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলে বসলেন – করোনা ভাইরাস মানব সৃষ্ট l তিনি বলেন বাদুড়ের করোনা ভাইরাস এ বিশেষত এইচ আই ভি (HIV) ভাইরাস কে কেউ একজন ম্যানিপুলেট করেছে ! এটা নরমাল নয় ! প্রফেশনাল, মলিকুলার বায়োলজিস্ট দের সৃষ্ট ! যদিও ওনার বক্তব্যে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান দিতে পারেন নাই l ফ্রেঞ্চ ইমুইলোজিস্ট এবং সায়েন্টিফিক কাউন্সিলের প্রধান তার এই বক্তব্যেকে এক কোথায় উড়িয়ে দিয়েছেন, বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই l

আবার কিছুদিন আগে মেডিসিন এ ২০১৮ তে নোবেল প্রাইজ পাওয়া জাপানি বিজ্ঞানীর বরাদ দিয়ে বলা হয়েছিল যা ভাইরাল হয়েছিল- “চীন করোনা ভাইরাস তৈরী করেছে। কিন্তূ সাথে সাথেই জাপানি নোবেল বিজয়ী ‘জনাব তাসুকু হনযে ‘ তার এই খবরকে ডাহা মিথ্যে বলেছেন এবং তিনি খুব মনোক্ষুন্ন হয়েছেন lসুতরাং কনস্পিরেসি থিওরি ( theory of Conspiracy) বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বহতা নদীর মতোই চলমান থাকবে আমরা পছন্দ করি বা না করি l কিছু মানুষ আনন্দ পায়, কিছু মানুষ অন্যকে বেকায়দায় ফেলতে চায় ইচ্ছাকৃত করে থাকে, আবার কিছু মানুষ অনিচ্ছাকৃত করে থাকে l যারা অন্যের ক্ষতির উদ্দেশ্যে অথবা মজা করার উদ্যেশে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্ম দেয় তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক l

লেখক :: প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক, ক্যালগেরি, কানাডা।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৪ মে ২০২০/এমএম


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ