আহসান রাজীব বুলবুল, প্রধান সম্পাদক, বাংলা নিউজ :: কানাডায় এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২০৮ জন আর সেরে উঠেছেন ২ হাজার ১৮৬ জন। কানাডার আলবার্টার এডমেনটন, টরন্টো, মন্ট্রিয়ল এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় প্রবাসী বাঙ্গালীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।কানাডাস্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিজানুর রহমান আজ এক ভিডিও বার্তায় প্রবাসী বাঙালিদের কনস্যুলার সেবা ডাক যোগে অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
কানাডায় প্রায় এক লাখ বাংলাদেশিদের বসবাস। বাংলাদেশি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রয়েছে প্রায় ৮৫০০। কানাডার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যয়নরত। বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা দিতে হটলাইন চালু করতে যাচ্ছে টরন্টোয় বাংলাদেশ কনস্যুলেট। করোনা ভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা শুনে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে এই হটলাইন চালু করা হচ্ছে। দু একদিনের মধ্যেই টোল ফ্রি এই হটলাইনের নম্বর ঘোষনা করা হবে।এদিকে কানাডার বিভিন্ন প্রভিন্সে প্রতিদিন ই স্ব স্ব প্রিমিয়ার এবং চীফ মেডিকেল অফিসার ভাইরাস এর আপডেট দিচ্ছেন এবং ব্রিফিংয়ে সচেতন করছেন সবাইকে।
আলবার্টার প্রিমিয়ার জেসন কেনি তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের এই মুহূর্তে একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং ধন্যবাদ জানান যারা ইতিমধ্যে এগিয়ে এসেছেন। আলবার্টার চীফ মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ডিনা হিন স সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ধৈর্যের সাথে সবাইকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।।
অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে অন্টারিও প্রাদেশিক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত থাকলে, ছোঁয়াচে রোগবিশেষজ্ঞদের ধারণা তাতে দুই বছর জীবনচক্রের জীবানুর প্রার্দুভাবে মৃত্যুসংখ্যা ৩ থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হবে। আজ শুক্রবার ‘কোভিড-১৯’ সংক্রান্ত পূর্বাভাষে ওই সংখ্যাটি জানানো হয়েছে, যাতে প্রাদেশিক সরকার ওই রোগের প্রকোপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট হয়।
ওই পূর্বাভাষপূর্ণ মডেলে বলা হয়েছে, যদি সরকার তা পরিপূরণে ব্যর্থ হয়, তাতে আগামী দুই বছরে মৃত্যুসংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এতে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্টারিও জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান নির্বাহী ডা. পিটার ডনেলি বলেন, ‘এই রোগের বিস্তৃতির পুরোটাই নির্ভর করছে জনগণের উপর; একই সঙ্গে কীভাবে তার প্রার্দুভাবটি জনগণ ধারণ করেছে।’ সেজন্য ওই সংখ্যাহ্রাসের বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘খারাপ বছরে’ ইনফ্লুয়েঞ্জায় ১,৫০০ জনের মৃত্যু একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে ১৫ হাজার সংখ্যাতত্ত্বটি ‘পুরোপুরি বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত’, কারণ কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুহারটি বেশি, তা একটি নতুন জীবানু, যা প্রতিরোধে কোনো চিকিৎসা কিংবা এখনও কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই সময়টা দুর্ভাবনাপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে শুধুই ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর দৃষ্টান্তটি উদ্ভাসিত।
এখন পর্যন্ত অন্টারিও প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,২৫৫ জন; যার মাঝে সুস্থ হয়েছেন ১,০২৩ জন ও মারা গেছেন ৬৭ জন। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সেখানে আরও কয়েক ডজন মারা গেছেন, যা প্রাদেশিক কর্মকর্তরা যুক্ত করেননি।এ জন্য ডা. পিটার ডনেলি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল বন্ধের পদক্ষেপ ‘উল্লেখযোগ্য উত্তরণ’ সাধন করেছে. তবে প্রকোপের ‘ঊর্ধ্বগতি হ্রাসে আরও কঠোরতা অপরিহার্য’।
অন্টারিও স্বাস্থ্য নির্বাহী ম্যাট অ্যান্ডারসনের মতে, বর্তমানে প্রদেশব্যাপী করোনা আক্রান্তদের জন্য ৪০০ নিবিড় পরিচর্যার শয্যা তথা ‘আইসিইউ বেড’ রয়েছে, যার সংখ্যা দ্রুতই ৯০০ -এ উন্নীত করা সম্ভব।কানাডায় প্রবাসী বাঙালিরা একে অপরের সহযোগিতা এগিয়ে আসছে। কমিউনিটি লিডাররা খবর নিচ্ছেন, ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সচেতন করছেন সবাইকে। ক্যালগেরির কিছু কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় গ্রোসারির ষ্টলগুলো ব্যস্ত রয়েছে প্রবাসী বাঙ্গালীদের ঘরে ডেলিভারি অর্ডার পৌঁছে দিতে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৪ এপ্রিল ২০২০/এমএম