Menu

আহসান রাজীব বুলবুল, কানাডা :: পৃথিবীর দেশে দেশে করোনা ভাইরাস দ্রুতই মহামারী আকার ধারণ করছে এবং প্রত্যেক দিনান্তে তা মানব সভ্যতার জন্য অধিক বিপর্যয়কর হয়ে উঠছে। ছোঁয়াচে এই রোগটিকে নিয়ে সব থেকে বড় সংকট হলো এর নিরাময়ে এখন পর্যন্ত কোন ঔষধ নেই। সেক্ষেত্রে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চলাই তো একমাত্র উপায়। এই রোগে আক্রান্ত জানা বা না জানা ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়াতেই কানাডিয়ানরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গরোধ ব্যবস্থা পালন করছে। ফেডারেল বা রাজ্য সরকার কোয়ারেন্টিনের জন্য কোন বাধ্যতামূলক নির্দেশনা জারি করেনি বটে, তবে জনস্বার্থে “অনুনয়” জানিয়েছে। সভ্য দেশের ভব্য নাগরিকদের জন্য সেই “অনুনয়টুকুই” যথেষ্ট।

কানাডায় প্রতিদিনই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে চললেও আশার বিষয় হচ্ছে, সারা বিশ্বে যখন করোনার সংক্রমণ বাড়ার খবর আসছে, আক্রান্তের, মৃতের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে, তখন কানাডার বৃটিশ কলম্বিয়া নতুন করে আক্রান্তের সংখ্য ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছে। প্রতিদিন যেখানে ২৪ শতাংশ হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিলো সেটি এখন ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। বৃটিশ কলম্বিয়ার প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. বনি হেনরি শনিবার সকালে এই ঘোষনা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসে কানাডায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিলো বৃটিশ কলম্বিয়ায়। সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে সেখানেই। সেই বৃটিশ কলম্বিয়ায় কারোনা অক্রান্তের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে।বৃটিশ কলম্বিয়ার প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. বনি হেনরি বলছেন কেবলমাত্র নাগরিকদের ঘরে থাকা এবং ব্যক্তিগত দুরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হ্ওয়ার পর নাগরিকদের ঘরে থাকার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। শনিবারের হিসেব অনুসারে বৃটিশ কলম্বিয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮৪ জন। তার মধ্যে ৮১ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। ১২ জন সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিউতে। আক্রান্ত হবার পর ৩৯৬ জন সুস্থ হয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত বৃটিশ কলম্বিয়ায় মারা গেছেন ১৭ জন। ।প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাঁর নিয়মিত ভাষনে বৃটিশ কলম্বিয়ার এই খবর অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক বলে আখ্যা দিয়েছেন।। সবার জানা দরকার ঘরে থাকার মাধ্যমে, ব্যক্তিগত দুরত্ব অনুসরন করার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যায়।।

অন্যদিকে কানাডাবাসীদের জন্য আরও একটি আশার খবর যে, নভেল করোনা ভাইরাস থেকে সেরে উঠেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি জর্জি ট্রুডো।শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন সোফি নিজেই। ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘আগের থেকে অনেক ভালো আছি। ব্যক্তিগত ফিজিশিয়ান ও অটোয়ার চিকিৎসকেরা বলেছেন, আমি ঝুঁকিমুক্ত।’‘‘যারা এই সময়ে আমার জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ রইল।’’

লন্ডন থেকে ফেরার পর গত ১২ মার্চ সোফি জর্জির করোনা পজিটিভ হয়। তখন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং তার পুরো পরিবার স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে চলে যান। যদিও ট্রুডো এবং তার তিন সন্তানের করোনা সংক্রান্ত কোনো লক্ষণ দেখা দেয়নি।জাস্টিন ট্রুডো প্রতিদিন তার বাসভবনের সামনে থেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন।কানাডায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ২৪০ জন মানুষ নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬১ জন। আর সেরে উঠেছেন ৫০৪ জন।

সবাই একটু সতর্ক হলেই এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিনা প্রয়জনে ঘর থেকে বের না হই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশগুলো মেনে চলি তবে এই ঘাতক করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হন। এখনকার সময়টা কানাডীয়ানদের জীবনে সম্পূর্ণ এক নতুন অভিজ্ঞতার! সঙ্গরোধ বা সঙ্গহীনতা মনুষ্য অভ্যাসের পরিপন্থি।

সামাজিক জীব মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অন্যের সাহচর্যের জন্য লালায়িত। সরকারী বেসরকারী অফিস আদালত, ব্যাংক, বীমা, ইত্যাদি সর্বস্তরের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কেউ কেউ বাড়ীতে বসে কাজ করছে, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানই টিম ভিত্তিক কাজ করছে। কানাডার বারগুলোর দরজা বন্ধ, তবে মদের দোকান খোলা। স্কুল/কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলো বন্ধ, ছাত্ররা বাড়ীতে বসে পড়ছে। রেষ্টুরেন্টগুলো খোলা, তবে দোকানে বসে খাওয়া যাবে না; খাবার কিনে বাড়ীতে নিয়ে খাচ্ছে সবাই। কাজ করতে পারুক বা নাই পারুক মালিকেরা কর্মিদের বেতন পৌঁছে দিচ্ছে, আর মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে সরকার।

বিমানবন্দরগুলো ফাঁকা, বাস-ট্রেনে লোক নেই, গাড়ীর দেশ কানাডার রাস্তায় হাতেগোনা দুচারখানা গাড়ী, বিশাল সব শপিং মলগুলো কোথাও কোথাও খোলা থাকলেও খরিদ্দারের আনাগোনা নেই মোটেই। ব্যবসায়িক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ। আমেরিকার সাথে বর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে ফেডারেল সরকার। দেশটির সব থেকে বড় এবং ব্যস্ততম শহর টরন্টো যেন এক মৃত নগরী, পর্যটকদের পদধ্বনি শোনা যায় না। চারিদিকে শুধু নীরবতা।

কানাডার স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকদের জন্য আকস্মিক এ দুর্বিপাক নিশ্চয়ই লম্বা হবে না। চুম্বনপ্রিয় এ জাতি যখন গণস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় তাদের ঠোঁট আগলাতে পেরেছে; এর চাইতে বড় আসার খবর আর কি বা হতে পারে? মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মানদীর মাঝি”তে তার নির্দেশিত পল্লীতে ঈশ্বর না থাকলেও যে দেশের সর্বস্তরের মানুষ মানবিক বিপর্যয় অনুধাবন করে স্বতস্ফুর্তভাবে “সঙ্গরোধ” করতে পারে; সেখানে সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা ও আবির্ভাব থাকবে– এটাই আমাদের বিশ্বাস!

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ৩০ মার্চ ২০২০ /এমএম


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ