আহসান রাজীব বুলবুল, প্রধান সম্পাদক, বাংলা নিউজ :: ন্যান্সি (ছদ্মনাম) ৮0 বছরের বৃদ্ধা, বয়সের ভারে ন্যুব্জ, কপোল রেখায় ফুটে উঠেছে বার্ধক্য। ম্রিয়মান বিদেশি বৃদ্ধার চোখে মুখে অপলক দৃষ্টিতে দেখেছি চিন্তার ছাপ।কানাডার প্রবাস জীবনে পেশাগত কাজে হরহামেশাই এমন সব লোকদের সাথে কাজ করতে হয়, দিতে হয় সেবা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উন্নত দেশে এসব বৃদ্ধাদের জন্য রয়েছে পৃথক থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা -যেটাকে বলা হয় “সিনিয়র হোম”। এতকিছুর পরেও তার চোখে মুখে এক অদ্ভূত চিন্তার ছাপ। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন আমাদের নৈতিকতা আর সততার কথা। আক্ষেপ করছিলেন আমাদের অশুভ শক্তির কথা, প্রকৃতির নির্মমতার কথা।
এ পৃথিবী একটি প্রকাণ্ড কর্মশালা। এখানে প্রবেশে হাজার ও দরজা রয়েছে ,কিন্তু তারপর? শিশু থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যুবক,- বিয়ে সংসার– তারপর প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বয়োবৃদ্ধি আর ওই না ফেরার দেশে চলে যাওয়া! এটাই জীবনের বাস্তবতা। জীবন একটাই ।মানুষ বারবার জন্ম নেয় না। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কত রকমের নাটক আর ছলচাতুরি। একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে -কখনো দেখেছি কি- নিজেকে? সারাজীবন শুধু জয়ী হবার প্রস্তুতি নিয়েছি, আর স্বপ্ন দেখেছি– যে কোন উপায়েই হোক না কেন জয়ী- আমাকে হতেই হবে। অথচ আমার দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে আমি কি সচেতন ছিলাম? মা-বাবার প্রতি কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি? সংসারে স্ত্রী-পুএ এর প্রতি কতটুকু নজর রাখতে পেরেছি? আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী অফিসের বস সহকর্মীসহ তথা সকলের প্রতি আমি কি সহানুভূতিশীল ছিলাম।
পৃথিবীর সংকটময় মুহূর্তে এসে কেনইবা এ কথা ভাবছি? সারাজীবন শুধু নিতেই শিখেছি কতটুকু পেরেছ দিতে? তা না হলে আজ অতি ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস (যার আকার ০.০১ মাইক্রো মিটার থেকে ০.১ মাইক্রো মিটার ব্যাসার্ধের যা ১ মিলিমিটারের ১০ লাখ ভাগের এক ভাগ ) যা চোখে দেখা যায় না, অথচ তার ভয়ে গুটা পৃথিবী আজ স্তব্ধ।
শুধু কানাডা নয়, সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে দিন দিন পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এমতাবস্থায় গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও আমরা কি মূল নৈতিকতায় ফিরে আসতে পেরেছি? মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য। এই সত্যর পিছনে লড়ছি আমরা। এই সত্যকে সত্য জেনেও করছি একের পর এক অসত্যের কাজ। প্রকৃতি কি খুঁজছে আমাদের মানবিকতা??
প্রবাস জীবনের সেই চিরন্তন হ্যান্ডসেক, আলিঙ্গন, ঠোঁটে চুম্বন, গালে চুম্বন, কাঁধে ঝুকে থাকা, হাতে হাত আঙটার মত আটকে রাখা, গালের পাশে স্পর্শ করা –ভালোবাসার অভিনয় গুলো এখন থমকে গেছে! মানুষের স্বাভাবিক শুভেচ্ছা, ভালোবাসার শারীরিক প্রকাশ- অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস এর ভয়ে — সবাই নিজেরাই গৃহবন্দি!
ফিরে আসি ন্যান্সির কথায়, জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি অনুভব করছেন সুসময়ে অতি মাত্রায় উল্লাসিত হওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনি দুঃসময় হতাশ হবার কোনো যুক্তি নেই। এই পৃথিবীর আনন্দ-বেদনা সুখ-দুঃখ সময়ের সাথে মিলিয়ে যায়। থাকেনা মানুষ, থেকে যায় তার কর্ম। তাই এখনই সময় সামাজিক অবক্ষয় ও নীতি নৈতিকতার অবক্ষয় নিয়ে ভাববার।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২২ মার্চ ২০২০ /এমএম