Menu

উন্নয়নে বৈদেশিক সহায়তার অবদান কমছে

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: এক সময়ের বিদেশনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ। দিনে দিনে স্বাবলম্বী হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহার বাড়ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তার অবদান কমে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তবে এ অবস্থায় উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরি।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড.শামসুল আলম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এটা ইতিবাচক বিষয়। কেননা আমাদের দেশের সামর্থ্য যে বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা তারই ইঙ্গিত বহন করে। রাজস্ব আদায় বাড়ছে। ফলে আমরা বেশি বেশি ব্যয় করতে পারছি। এক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। আমাদের জিডিপির আকার বাড়ছে। সব কিছু মিলে দেশীয় অর্থের ব্যবহার বাড়ছে। তবে এখনও এডিপিতে যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ধরা হয়, সেটির দ্রুত ব্যয় নিশ্চিত করা উচিত। নানা কারণে সে অর্থ ঠিকমতো ব্যয় করতে পারে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুটি উৎস হতে অর্থের যোগান দেয়া হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ। অন্যটি প্রকল্প সাহায্য বা বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত পণ্য সহায়তা, খাদ্য সহায়তা, বাজেট সাপোর্ট, বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা এবং পলিসি ঋণ ইত্যাদি। কিন্তু দিনে দিনে এসব সহায়তা কমে আসছে। গত পাঁচ বছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক অর্থের অবদান কমেছে।

এক্ষেত্রে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা মোট আরএডিপির ৩৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মোট আরএডিপির তুলনায় যা ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। মোট আরএডিপির তুলনায় ৩১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। মোট আর এডিপির তুলনায় যা ৩০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট আরএডিপির ৩২ দশমিক ৭১ শতাংশ। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় টাকার অংকে বৈদেশিক সহায়তা পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু অবদানের ক্ষেত্রে শতাংশের দিক থেকে কমেছে।

অন্যদিকে বিপরীত চিত্র সরকারি তহবিলের নিজস্ব অর্থায়নের ক্ষেত্রে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আরএডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৪২ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা, যা মোট আরএডিপির ৬৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫২ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৭৪৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ৬৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৪৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা, ৬৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা মোট আরএডিপির ৬৭ শতাংশ।

মোস্তফা কে. মুজেরি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে যে পরিমাণ সম্পদের প্রয়োজন তা সরকারি বিনিয়োগ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রচুর বৈদেশিক সহায়তা লাগবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বৈদেশিক সহায়তার অবদান কমে যাওয়াটা ভালো না খারাপ সেটি ভেবে দেখার বিষয়। কারণ ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়ার লক্ষ্যসহ সরকারের বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণে অর্থের প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হোক, ঋণ হোক বা যে কোনোভাবেই হোক বৈদেশিক অর্থায়ন প্রয়োজন। কারণ যে সুদে আমরা ঋণ নেব সেই অর্থ এমন জায়গায় ব্যয় করতে হবে, যাতে রিটার্ন এমনভাবে আসে যেটি সুদের চেয়েও অনেক বেশি লাভ হয়। তাহলেই দেশে যে পুঁজি সংকট সেটি আর থাকবে না।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৯/ইএন


Array