Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: আমাদের কাছে অনেক নারী আসেন মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা কিংবা সারা মাসজুড়েই তলপেটে ব্যথা থাকে। এই উপসর্গের সঙ্গে এন্ডোমেট্রিওসিস নামের একটি অসুখের উপসর্গ মিলে যায়। জরায়ুর একদম ভিতরের লেয়ারটির নাম হল এন্ডোমেট্রিয়াম (যেখানে প্রেগন্যান্সি হয়)। কোন কারণে যদি এই এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে জন্মায়, তখন সেখানে এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে।

কেন হয়?

মাসিকের সময় যে পরিবর্তনগুলো হয়, জরায়ুর বাইরে জন্ম নেয়া সেসব এন্ডোমেট্রিয়ামেও একই ধরনের পরিবর্তন হয়। ভিতরের এন্ডোমেট্রিয়াম মাসিকের সময় রক্ত হিসেবে শরীরের বাইরে চলে আসে কিন্তু অন্যান্য স্থানেরগুলো ওখানেই থেকে যায় ও আস্তে আস্তে রক্ত ও অন্যান্য উপাদানগুলো ঘন হয়ে সিস্ট হয় কিংবা আঠালো এন্ডোমেট্রি ও ডিপোজিট হয়। ওভারি বা ডিম্বাশয়ে যখন হয়, তখন এটাকে চকলেট সিস্ট বলে আর ইউটেরাস বা জরায়ুর মায়োমেট্রিয়ামে জন্ম নিলে এডিনোমায়োসিস বলে।

কোথায় হয়

* জরায়ু, ওভারি ও তার আশপাশে

* খাদ্যনালি

* মূত্রথলি, মূত্রনালি

* পেরিটোনিয়াম

* আগের কোনো অপারেশনের কাটা স্থান (স্কার এন্ডোমেট্রিওসিস)

* এমনকি ফুসফুস, কিডনি, নাভি ও অন্যান্য দূরবর্তী স্থান।

উপসর্গ

* মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা

* মাসিকের সময় রক্ত বেশি ভাঙা কিংবা ঘন ঘন মাসিক হওয়া

* মাসিকের সময় পায়খানা প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া

* সহবাসে ব্যথা

* সবসময় তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া

* ইনফার্টিলিটি বা সন্তান লাভে ব্যর্থ হওয়া

* কারও কোনো উপসর্গই থাকে না, চিকিৎসকরা নির্ণয় করেন এ রোগের উপস্থিতি।

কাদের বেশি হয়

* সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সী নারীরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন।

* এন্ডোমেট্রিওসিস সাধারণত একই পরিবারের সদস্যদের মাঝে হয়ে থাকে। রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের মাঝে ৭ গুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

* এ অসুখকে বলা হয় উচ্চবিত্তদের অসুখ। তার মানে ধনী মানুষদের হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

* এন্ডোমেট্রিওসিসে ভোগা রোগীদের ৫০-৭০ শতাংশ নারীরা সাধারণত নিঃসন্তান হয়ে থাকেন।

রোগ নির্ণয়

* রোগীর হিস্ট্রি ও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষ-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ অনেকটাই নির্ণয় করা যায়।

* আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিশেষত ট্রান্সভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফি করা যেতে পারে।

* বড় সিস্ট থাকলে সিএ-১২৫ (ঈঅ-১২৫) করা উচিত।

* যারা বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভুগছেন তাদের ডিম্বাণুর রিজার্ভ টেস্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে এএমএইচ (AMH) টেস্ট করানো উচিত। কারণ, ওভারির এন্ডোমেট্রিওসিস ডিম্বাণুর রিজার্ভ কমিয়ে দেয়।

* কখনও কখনও এমআরআই এর সাহায্য নিতে হয়।

চিকিৎসা

* এই চিকিৎসা শুরু করার আগে যথাযথ কাউন্সেলিং জরুরি। এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও অনেক সময় হতাশাব্যঞ্জকও বটে। চিকিৎসার ফলে একবার ভালো হলেও নতুন করে আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

* মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা থাকলে ব্যথার ওষুধ দিতে হবে।

* রক্ত বেশি ভাঙলে ট্রানেক্সামিক এসিড জাতীয় ওষুধ উপকারী।

* জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল একটানা কয়েক মাস খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

* প্রজেস্টেরন বা প্রজেস্টোজিন জাতীয় ওষুধ ফলপ্রসূ।

* কখনও গোনাডোট্রোপিন রিলিজিং হরমোন এনালগ জাতীয় ইনজেকশন মাসে মাসে ১ বার করে দিতে হয়, এবাবে ৩-৬টা ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।

* ওষুধে কাজ না হলে অপারেশন করতে হবে (ল্যাপারোস্কোপি বা ল্যাপারোটোমি)।

একবার অপারেশন করলেও এটা আবার নতুন করে হতে পারে ও ওভারিতে এন্ডোমেট্রিওসিস হলে ডিম্বাণুর রিজার্ভ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এটা রোগীকে অবহিত করতে হবে। তাই যারা বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভুগছেন তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রেগন্যান্সি নিতে হবে।

কোনো কোনো নারীর উপসর্গের তীব্রতা অনেক বেশি ও বারবার এন্ডোমেট্রিওসিস হয়, তখন জরায়ু ও ওভারি অপারেশন করে ফেলে দিলে এ রোগের নিরাময় হতে পারে।

ফলোআপ

* এন্ডোমেট্রিওসিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, এর ফলোআপ করা জরুরি।

* একবার ভালো হয়ে গেলেও আবার এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে, যতদিন মাসিক হবে, ততদিন পর্যন্ত হতে পারে, এটা রোগী ও তার পরিবারকে জানাতে হবে।

* এন্ডোমেট্রিওটিক সিস্ট বা চকলেট সিস্ট হতে পরবর্তীতে ক্যান্সার হতে পারে। যদিও তার আশঙ্কা খুব কম, মাত্র ১% ও বিশেষত মেনোপজের পরে হওয়ার আশঙ্কা থাকে)।

* ঠিকমতো চিকিৎসা ও নিয়মিত ফলোআপ এন্ডোমেট্রিওসিস হতে ভালো থাকা যায়, তাই এর ফলোআপ জরুরি।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৩ নভেম্বর ২০১৯ /এমএম


Array