২৪ বৈশাখ ১৪৩২
০৭ মে ২০২৫
প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশের ভিতরে এবং প্রবাসে প্রায় ৪০টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, কৃষিবিদ, আইনবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীদের নিয়ে গঠিত আমরা একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে বাংলাদেশের অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যুদ্ধ প্রস্তুতির আহবান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন যে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে মায়ানমার রাখাইন সীমান্তে করিডোর প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিব পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষিত সিদ্ধান্ত অস্বীকার করলেও করিডোর প্রদানের যৌক্তিকতা ও সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এই ধরনের করিডোর প্রদান ও যুদ্ধ প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আইনত অনির্বাচিত এবং ক্ষণস্থায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত। করিডোর প্রদান এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত একমাত্র বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংসদে বিস্তারিত আলোচনা, তর্ক বিতর্ক এবং চুলচেরা বিশ্লেষণের পর গ্রহণ করতে পারেন।
জনগণের মেন্ডেড বিহীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের সমূহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। মিয়ানমারের বৈধ সরকার ইতিমধ্যেই এই ধরনের করিডোর ব্যবস্থার ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন। মিয়ানমার সরকারকে বাইপাস করে রাখাইনের বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে এই ধরনের করিডোর প্রদানের চুক্তি অবৈধ, যা মিয়ানমার সরকারের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে। তাছাড়া মিয়ানমার ও মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ভারত, চীন ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক রয়েছে। করিডোর চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা ওই অঞ্চলে বৃহৎ পরাশক্তির জড়িয়ে পড়া এবং যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথা বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষকগণ ইতিমধ্যেই তুলে ধরেছেন। ফলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এই অঞ্চলে যুদ্ধের গোলাগুলি, বোমা বর্ষণ, মারামারি, কাটাকাটি ছড়িয়ে পড়বে, যা গাজার মত ধ্বংসলীলার সৃষ্টি করবে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে “সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়” হচ্ছে ৫৪ বছর যাবত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র। প্রলোভোনে পড়ে, অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই নীতির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহৃত হতে দিলে বাংলাদেশ তার ঐতিহ্য হারাবে, হযে পড়বে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৃহৎ শক্তির যুদ্ধের খেলার মাঠ। ফলে ইতিমধ্যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি, শিল্প কাঠামো, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধি, ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা, জন জীবনের নিরাপত্তা এবং শান্তি চরম হুমকির মুখে পড়বে।
প্রসঙ্গত আমরা স্মরণ করতে পারি বাংলাদেশ, ভারতের মিজোরাম, মিয়ানমার, যুদ্ধরত রাখাইন রাজ্য, কুকিচিন অধ্যুষিত চিন রাজ্য, সেন্ট মার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপজ্জনক অবস্থানের কথা। এই করিডোর চুক্তি হলে নানামুখী স্বার্থের কারণে এই অঞ্চলগুলোর জনগোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হবে বৈরিতা, হানাহানি, জঙ্গি তৎপরতা, মাদকের ব্যবসা, অস্ত্র চোরা চালান ও ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা। এই চরম বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই চাউর হওয়া একটি বৃহৎ শক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে নতুন কোন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিপন্ন হবে, একথা বলাই বাহুল্য। এই অঞ্চলে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বৃহৎ পরাশক্তিসহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার রিস্ক বাংলাদেশের জন্য কত মারাত্মক হতে পারে তা কল্পনা করলেও আমরা শিউরে উঠি।
মোহাম্মাদ ইউনুসের অসাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে, অর্থ উপার্জনের পথ ও অবৈধ রাষ্ট্র ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বিনিময়ে করিডোর প্রদান করলে উপরে উল্লেখিত ঘটনাবলীর ফলে দ্রুত বাংলাদেশ দুর্বল হবে, তার ভূমি হারাবে, নানা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ দেশের ভিতরে চরম অস্থিরতা তৈরি করবে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে, কৃষি উৎপাদন বিপন্ন হবে, মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে, এমনকি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিবে। ফলে বাংলাদেশকে পরাশক্তির অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের অস্ত্র কেনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে বাধ্য করা হবে সাহায্যের নামে, বিনিমযয়ে দেশের তেল গ্যাস সহ যাবতীয় খনিজ সম্পদ চুক্তি করে সেইসব সামরিক শক্তিধর দেশকে দিয়ে দিতে হবে। একবার ভেবে দেখুন, এই করিডোর চুক্তি বাংলাদেশকে কি ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই আমরা শুনেছি সরকারের উপদেষ্টাগণ ঘোষণা করেছেন, দেশের সীমান্ত দেশের নিয়ন্ত্রণে নেই, দেশের মানচিত্রে পরিবর্তন আসছে ইত্যাদি ভয়ংকর সব কথাবার্তা।
প্রিয় দেশবাসী, এই ভয়ংকর সময় উপস্থিত হবার পূর্বেই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সহ আপনাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করুন, সমুহ বিপদকে অনুধাবন করুন এবং দ্রুত কোটি কণ্ঠে সোচ্চার হোন। আমাদের সর্বনাশ হওয়ার আগে, অনেক বেশি দেরি হওয়ার আগেই আপনারা সচেতন হোন। দেশবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ক্ষমতা একবার আপনাদের হাতছাড়া হয়ে গেলে, এইসব অবৈধ দেশ ধংশকারী সিদ্ধান্ত আমাদের সবার জন্য ডেকে আনবে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট, দুর্ভিক্ষ এবং বিপন্ন হবে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। নিশ্চয়ই আমরা কেউই এই ধরনের অমানিশা কামনা করিনা।
বিনীত,
গ্লোবাল সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভারন্যান্স এর সদস্যবৃন্দ।
Email: contact@globalcdg.org
Website: www.globalcdg.org
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১০ মে ২০২৫ /এমএম