প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: গেঁটে বাত বা গাউট হলো এক ধরনের প্রদাহজনিত বাত, যা রক্তে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড জমে গাঁটে স্ফটিক তৈরি করায় হয়ে থাকে। এতে হঠাৎ করে জোড়ায় তীব্র ব্যথা, লালচে ভাব ও ফোলাভাব দেখা দেয়। সাধারণত পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে শুরু হলেও এটি শরীরের যে কোনো জয়েন্টে হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড হলো পিউরিন নামক প্রাকৃতিক উপাদানের বিপাকজাত বর্জ্য, যা কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে গেলে বা অতিরিক্ত পিউরিনজাত খাবার গ্রহণ করলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড জমে গেঁটে বাত তৈরি হয়। এটি শুধু ব্যথাই বাড়ায় না, বরং হৃদরোগ ও কিডনির জটিলতা বাড়ানোরও আশঙ্কা তৈরি করে। তাই এ রোগ ব্যবস্থাপনায় ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কী কী খাবেন?
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: আমলকি, পেয়ারা, লেবু, কমলা, কিউই, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, পেঁপে— এসব ফলে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ইউরিক অ্যাসিড নিঃসরণে, ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দৈনিক পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
আনারস ও আপেল: আনারসে থাকা ব্রোমেলিন ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আপেলে থাকা মেলিক অ্যাসিড ও অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড লিভার পরিষ্কারে সহায়ক এবং শরীরের অ্যালকেলাইন ব্যালান্স বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।
লো-ফ্যাট প্রোটিন: ডিমের সাদা অংশ, লো-ফ্যাট দুধ, টক দই ও ছানা, কাঠবাদাম এবং দেশি নদীর মাছ (যেমন- রুই, কাতল, পাবদা) তুলনামূলকভাবে কম পিউরিনযুক্ত এবং উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে। এতে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
আঁশযুক্ত খাবার: লাউ, পেঁপে, গাজর, করলা, কুমড়া, শাকসবজি ও সালাদ অন্ত্রে ইউরিক অ্যাসিড শোষণ কমায়। প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম মৌসুমি সবজি, সালাদ ও আঁশসমৃদ্ধ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট (লাল চাল, লাল আটার রুটি, ওটস, মিষ্টি আলু) গ্রহণ উপকারী।
পর্যাপ্ত পানি: দিনে অন্তত ১২ গ্লাস পানি পান কিডনির মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে গাঁটে স্ফটিক জমা প্রতিরোধ করে। গ্রিন-টি, লেবু পানি, আদা পানি ও ডাবের পানি পান করতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর চর্বি ও মসলা: ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, কাঠবাদাম প্রদাহ কমায়। আদা, রসুন, হলুদ, গোলমরিচ— এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সহায়ক।
কী কী খাবেন না?
* লাল মাংস (গরু, খাসি), প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (কলিজা, ভুঁড়ি, পায়া), সামুদ্রিক মাছ (ইলিশ, চিংড়ি), শুঁটকি, ছোলা, রাজমা, সয়া প্রোডাক্ট।
* ইস্ট ও ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার (পাউরুটি, কেক, কোমল পানীয়, চকলেট, চিনি-গুড়-মিষ্টি, মধু)।
* উচ্চ পিউরিনযুক্ত সবজি (পুই, পালং শাক, মটরশুঁটি, মাশরুম)।
* প্রসেসড ফুড, ট্রান্স ফ্যাট ও ইনস্ট্যান্ট রেডি-টি ইট মিল।
* মদ, বিয়ার, তামাক ও ধূমপান।
সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন: কলা, আম, কাঁঠাল, সাদা চালের ভাত, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার।
জীবন-যাপনে পরিবর্তন
* প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট রোদে থাকুন— ভিটামিন ডি ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
* রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন।
* নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন— অতিরিক্ত ওজন ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
গেঁটে বাত নিয়ন্ত্রণে শুধু ওষুধ নয়, বরং খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি, সঠিক ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো খাদ্য তালিকা গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: পুষ্টিবিদ, বায়োজিন কসমোসিউটিকেলস
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৫ এপ্রিল ২০২৫ /এমএম