প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: নতুন করে ভারতীয় পেঁয়াজ না এলেও দেশের বাজারে লাগামহীন পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত শনিবারও প্রতি কেজির দাম ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।
তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপাদন ও সরবরাহ করা না গেলে, সিন্ডিকেট ভেঙে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।গত শনিবার হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ভারত। এতেই যেন লঙ্কাকাণ্ড দেশের পেঁয়াজের বাজারে। কিন্তু নতুন শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ বাংলাদেশের বাজারে ঢোকার আগেই বেড়ে গেছে পণ্যটির দাম। এতে জিম্মি দশা ক্রেতাদের। বাড়তি এই দামের জন্য আমদানিকারকদের দুষছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা সরবরাহের ঘাটতির কথা বললেও আড়তগুলোতেও পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। ফলে খুচরা বাজরে পেঁয়াজের দর ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই।
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বাজারের প্রতিটি গুদাম ও মোকাম ভারতীয় পেঁয়াজে ভর্তি। তবুও পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বাড়ার কথা জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন- আমরা তো আমদানিকারকদের থেকে কিনে তারপর পেঁয়াজ বিক্রি করি। এখন তারা যা বলবেন, আমরা তা করতেই বাধ্য। তারা সুযোগ পেয়েছেন, তাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে গত শনিবার পর্যন্ত কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। ওইদিন ভারতের শুল্কারোপের খবর ছড়িয়ে পড়লে পেঁয়াজের দাম কেজি ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ভারতের বাড়তি রপ্তানি শুল্ক উল্লেখ করে এক পেঁয়াজ আমদানিকারক বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। তাই দাম বেশি। সামনে বাড়তি শুল্কের পেঁয়াজ আসলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়বে ৬৫ টাকা। আমরা তো এখনই ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। মূলত ভারতের শুল্ক আরোপ করায় দাম ঊর্ধ্বমুখী।
গত মে মাসের শেষ দিকেও দেশের পেঁয়াজের বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়। তখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ধাপে ধাপে ১০৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে। পরে ৫ জুন সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে ধীরে ধীরে দাম কমে আসে।গত রবিবার রাজধানীতে এক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এক অনুষ্ঠানে বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কোনো কারণ নেই। ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও, এখন পর্যন্ত দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ টন। এতে পেঁয়াজের এতই সংকট দেখা দিলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এতদিন চুপ করে বসে থাকত না। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। এছাড়া দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল ফরিদপুর, পাবনার কৃষকদের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজের মজুত আছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পচনশীল হওয়ায় ও সংরক্ষণ করতে না পারায় দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপাদন ও সরবরাহ করা না গেলে, সিন্ডিকেট ভেঙে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও; সেটি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায়, অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স আরোপ করেছে ভারত। এতে বাংলাদেশে আমদানি কম হয়েছে। তাই দেশেও এর প্রভাব পড়ছে। তবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২১ আগস্ট ২০২৩ /এমএম





