আহসান রাজীব বুুলবুুুুল, কানাডা :: উৎসব মুখর ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কানাডার ক্যালগেরির ম্যাক্সবেল সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ১৪২৬। তুষার আবৃত্ত কানাডার কর্মময় এক ঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙ্গালীরা দুইদিন ব্যাপী আনন্দ উৎসবে মেতেছিল অন্যরকম এক মিলন মেলায়।
বাংলার সবুুজ মাঠ পেরিয়ে বিশ্ব প্রান্তরে সূর্যেও হাসি তেমন দেখা না মিললেও বৈশাখের রঙ, ভালবাসার রঙ, আড্ডার রঙ, লোকজ ভাবনা, বাংলার ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় একে অপরের সান্নিধ্যে শ্রদ্ধা, ভালবাসা বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়-মন ভরে উঠেছিল প্রবাসী জীবনের জয়গানে। শিশু-কিশোর আর নারীপুুরুষের পদভারে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল ম্যাক্সবেল সেন্টার।
নব প্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার কৃষ্টি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় স্বত্ত্বাকে তুুলে ধরাই ছিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের মূল লক্ষ্য। মেলায় ছিল রং বেরং এর বাহারী শাড়ী, বাংলার ঐতিহ্যময় পিঠা পুলি খাবারসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন ধরণের প্রায় শতাধিক স্টল, মূল আকর্ষণ ছিল ছোট ছোট শিশু কিশোরদেও হাতে মুুখ ও মুখোশ নিয়ে বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বৈশাখী সন্ধ্যায় দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। শিশুদের মাঝে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে।
পরিবেশিত হয় প্রবাসী শিল্পীদের কন্ঠে রবীন্দ্র, নজরল, জীবনানন্দ, পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের সংগীত, কবিতা ও নৃত্য। নতুন বর্ষ বরণ উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি কাজী এহসান ।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী কনকচাপা,পিন্ট,ুঘোষ,স্বপ্নীল সজীব মধ্যরাত পর্যন্ত প্রবাসী বাঙ্গালীদের সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখে।এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে যোগ দেয় ফ্যাশান ডিজাইনার বিপ্লব সাহা, নৃত্য শিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ ও অভিনয় শিল্পী বিজরী বরকতউল্লাহ। পদ্মা-যমুনা মিলনের মতই প্রবাসী বাঙ্গালীদেও পাশাপাশি বিদেশীরাও এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উপোভোগ করেন সকাল থেকে রাত অবধি।
আনন্দের আবহে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বাঙ্গালীর চিরাচরিত আড্ডা আর লোকে লোকারণ্যে মুখরিত গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, নাচের মুদ্রায় আর উপস্থাপনায় কোথাও যেন ঘটেনি ছন্দপতন।দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের মিডিয়া পাটনার ছিল চ্যানেল আই ও আলবাট্রার একমাত্র বাংলা অনলাইন পত্রিকা বাংলা নিউজ সিএ।
বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি কাজী এহসান জানালেন, আমাদের রয়েছে সুন্দর একটি সংস্কৃতি যে বলয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি,আমাদের সেই ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। আর তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। বিদেশীরাও উপভোগ করছে আমাদের এই অনুষ্ঠান, বিভিন্ন দেশের ভাষাভাষীর মানুষরাও অংশ গ্রহন করছে ও উপভোগ করছে আমাদের এই অনুষ্ঠান
বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধানর সম্পাদক মোঃ রশিদ রিপন জানালেন, নতুন বছর সবার জীবনে আনন্দ আর অনাবিল শান্তি বয়ে আনবে, দেশের সেই রমনার বটমূল এক ঘন্ড বাংলাদেশকে আমরা এখানে তুলে ধরেছি। দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্টান সবাই উপভোগ করছে । আগামীর দিনগুলো আরো সুন্দর হবে সমগ্র বিশ্বে শান্তি বিরাজ করবে এমনটাই আমাদের কামনা।
দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের কোঅডিনেটর খায়ের খন্দকার রুবেল জানালেন, পুরো অনুষ্টানটি আমরা সাজিয়েছি বাংলাদেশের রমনার সেই বটমূলের আঙ্গিকে যেখানে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও প্রবাসে আমরা ফিরে পেয়েছিলাম লাল-সবুজের বাংলাদেশকে।
দূরপ্রবাসে বাঙ্গালী জীবনে বাঙ্গালী সংস্কৃতির এ উৎসব যেন এক মহামিলন। কর্মজীবনের পাশাপাশি সম্প্রীতির বন্ধনে এমনি করে বারবার এই মহামিলনে জেগে উঠুক নতুনপ্রজন্ম। হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে লাল সবুজ আর মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশ হয়ে উঠুক আরো সুন্দর, আরো উন্নত–এমনটাই প্রত্যাশা ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৯/ইএন