বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: আদর্শ পরিবার বলতে কী বোঝায়? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ৫০ বছর বয়সী এক গৃহিণী তাসলিমা বেগম বলেন, স্বামী-সন্তান, ছেলেমেয়ে ও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে একই ছাদের নিচে থাকাটা আদর্শ পরিবারের একটি সাধারণ ছবি হতে পারে। তবে পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকা দেখা গেলেও সুখ বা শান্তি কিন্তু দেখা যায় না।তাই সুখ-শান্তির বিষয়টি আরও গভীরতম। যেখানে মায়া-মমতা, ভালোবাসা-বন্ধন, সংসারের আয়-ব্যয়- অনেক কিছুই জড়িত। আর এসব একত্রে পাওয়া হতে পারে আদর্শ পরিবারের একটি রঙিন দৃশ্যপট।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এসএম মিজান বলেন, আদর্শ পরিবার বলতে বুঝি- পরিবারের সবার সঙ্গে একটি ভালো সম্পর্ক থাকা। সবাই সবার সুখ-দুঃখ শেয়ার করবে, একজন অন্যের ভালো-মন্দে এগিয়ে আসবে, পরামর্শ দেবে ইত্যাদি।তবে আদর্শ পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ জায়গাতেও আদর্শিক হতে হবে। যেমন- বাবা-মা সন্তানদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখবেন। সন্তান ঠিকমতো স্কুল-কলেজে যায় কিনা, সে কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, বা কোনো খারাপ নেশা বা আড্ডায় জড়িয়ে পড়ছে কিনা- এসব দেখাটাও আদর্শ পরিবারের আদর্শ বাবা-মা’র অন্যতম কর্তব্য।
অবশ্য, শুধু এসব কর্তব্য মানলেই যে আদর্শ বাবা-মা হওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। বরং এর সঙ্গে যোগ করতে হবে সন্তানের চাহিদা-বাসনা এবং ভালো-মন্দ আর কল্যাণের প্রখর দৃষ্টি।যেমন- সন্তানদের নিয়ে মাঝে মধ্যে ঘুরতে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, বিনোদন বা শিক্ষামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া, নিজের চাকরি-ব্যবসা বা রোজগার সম্পর্কে সন্তানদের ধারণা দেয়া, বিশেষ করে নিজের সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে সন্তানদের শিক্ষা দেয়াটাও আদর্শ বাবা-মা’র অন্যতম কাজ।অন্যদিকে আদর্শ পরিবারের আদর্শ সন্তানদেরও বাবা-মা’র প্রতি রয়েছে অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য। যেমন- বাবা-মা’র আয় সম্পর্কে যদি সন্তানরা জানে, তাহলে সন্তান বাবা-মা’র কাছে সেসব জিনিসই চাইবে যেটি তার বাবা-মা’র সামর্থ্যরে মধ্যে আছে।
নয়তো বাবা-মা’র সামর্থ্যরে মধ্যে নেই এমন কিছু চেয়ে সংসারে এক প্রকার অশান্তি ডেকে আনা হয়। অর্থাৎ পরিবারের আয়-ব্যয়-মানসম্মানের দিকেও সন্তানদের তাকাতে হবে।তাহলে সংসারে অশান্তি ঢোকার সম্ভাবনা কম। এছাড়া বাবা-মা’র কাজে সন্তানরা সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করবে- এটিও সন্তানদের কর্তব্য। সেটা রান্না-বান্নায় বা বাড়ির অন্য কাজেও হতে পারে। কিংবা বাবা-মা’র অন্য কাজেও হতে পারে।
অন্যদিকে যাদের সদ্য সন্তান হয়েছে বা ছোট্ট সোনামণি আছে তাদের বাবা-মা’ দু’জন মিলেই লালন-পালন করবেন- এমনটাই আদর্শ। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই প্রত্যেককে ছাড়ের মানসিকতা দেখাতে হবে। তবেই হবে আদর্শ পরিবার।
আদর্শ পরিবারের আরও কিছু নমুনা যোগ করা যেতে পারে। যেমন- বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, যারা সদ্য সংসার শুরু করেছেন বা যাদের সদ্য সন্তান হয়েছে বা যাদের ছেলেমেয়েরা সদ্য স্কুলে যেতে শুরু করছে, তাদের প্রত্যেকের নামেই কিছু কিছু অর্থ সঞ্চয় করা যেতে পারে।সেটি মাসিক ডিপোজিট বা ফিক্স ডিপোজিট বা নানা ভাবেই হতে পারে। এতে সন্তানদের লেখাপড়া বা বড় হলে বিয়ে দেয়া বা বিপদ-আপদে কাজে লাগতে পারে। সেটি বেশি অ্যামাউন্ট হতে হবে এমন কথা নয়, কম অ্যামাউন্ট হলেও সমস্যা নেই। কারণ, কম করেই এক সময় এটি বেশি হয়ে যাবে। জরুরি হল শুরুটা করা।
এসবের পাশাপাশি আদর্শ পরিবার হিসেবে আরও একটি জায়গায় জোর দিতে হবে। সেটি হল বিশ্বাস। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা বা ছেলেমেয়ে প্রত্যেকেই বিশ্বাসের জায়গায় অনড় থাকতে হবে। কারণ, বিশ্বাসের ঘুণপোকা আদর্শ পরিবারে বিরহের সুর তুলতে পারে।আরেকটি কথা। অন্যের স্বামী বা অন্যের বাবা-মা’ তার স্ত্রী বা ছেলেমেয়ের জন্য কী করছে বা না করছে সেটি না দেখে বরং নিজের স্বামী বা নিজের বাবা-মা’ যেটুকু দিতে পারে বা সহযোগিতা করতে পারে সেটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাটাই আদর্শ পরিবারের অন্যতম একটি কাজ।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৯ নভেম্বর ২০১৯ /এমএম





