Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: আর মাত্র একদিন পর কুরবানির ঈদ। এই ঈদ ঘিরে প্রায় আড়াই মাস আগে থেকে অস্থির করা হয়েছে মসলা পণ্যের বাজার। বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। পরিস্থিতি এমন এক কেজি এলাচ কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ৪২০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যা গত বছর একই সময় মানভেদে ১৫০০-২১০০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ৬০ টাকা ছিল। এছাড়া অন্যান্য মসলা পণ্যের মধ্যে হলুদ, আদা-রসুন, জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনির দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে ঈদ ঘিরে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিক্রেতারা জানান, শুক্রবার প্রতি কেজি এলাচ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৫০০-৪২০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ১৫০০-২১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা, যা আগে ১৪০০-১৫০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৫২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা, যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি হলুদ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর একই সময় ২৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, যা আগে ২৩০ টাকা ছিল।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা, যা আগে ৪৬০ টাকা ছিল। দেশি রসুন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর কুরবানির ঈদের সময় ১৪০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, যা আগে ১৫০ টাকা ছিল। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা।

রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. জাকির হোসেন বলেন, ঈদ ঘিরে কিছু মসলা পণ্য কিনতে এসছি। কিন্তু বাজারে সব ধরনের মসলা পণ্যের দাম অনেক বাড়তি। প্রতি বছর কুরবানির ঈদ আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে মসলার দাম বাড়ায়। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তদারকি সংস্থা এক প্রকার নির্বিকার। কেউ কিছু বলছে না। এটা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পকেট কাটা যাচ্ছে ভোক্তার।

দাম বাড়ার বিষয়ে একই বাজারের মসলা বিক্রেতা মো. ইমামুল হক বলেন, পাইকারি বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে মসলা পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। বিক্রেতারা বাড়তি দামে বিক্রি করায় আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে।

তবে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, অন্যান্য মসলার দাম আমদানি খরচের হিসাবে তুলনামূলক বাড়েনি বরং কম রয়েছে। শুধু এলাচের দামটা একটু বেশি। কারণ বেশিরভাগ এলাচ আসে ভারত থেকে। সেখানে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। এখন ডলারের দাম বেশি। বিশ্বব্যাপী মসলার দাম বেশি। মসলা আমদানিতে পরিবহণ খরচ বেড়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, খুচরা বিক্রেতারা কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

এদিকে মসলার পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে সালাদের উপকরণের মধ্যে শসা, টমেটো ও গাজরের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি শসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সাত দিন আগেও ৮০ টাকা ছিল। একইভাবে বেড়েছে টমেটোর দাম। বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। পুরাতন গাজর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা ও নতুন গাজর ১৪০ টাকা। আর লেবু হালি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা দরে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, দাম বাড়ার কথা না থাকলেও অযৌক্তিকভাবে বাজারে কারসাজি করে কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিগত রোজায় দেখা গেছে, কিছু পণ্যের চাহিদাকে পুঁজি করে বাজার অস্থির করে রাখা হয়েছিল। তেমনিভাবে কুরবানির ঈদ এলেই গরম মসলার দাম বাড়ে। গত এক মাসে গরম মসলার দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এভাবে দাম বাড়ার কথা না। তাহলে নিশ্চয়ই বাজারে কোনো কারসাজি হচ্ছে। মানুষের এ নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। কেউ অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১৫ জুন ২০২৪ /এমএম