Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  হঠাৎ বাজারে বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। এই বাড়তি দামকে পুঁজি করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় অনেক দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুই পণ্য। আর পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে এই দামে আটা-ময়দা কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৫ টাকা। আর ময়দা প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা। কেউ কেউ এর চেয়ে বাড়তি দামেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন আটা-ময়দা।

এদিকে আটা ও ময়দার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, আটা-ময়দার দাম বাড়তি হওয়ায় বেকারিপণ্যসহ আটা-ময়দা দিয়ে প্রস্তুতকৃত খাদ্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। আটা আর চালের দাম প্রায় সমান হয়ে যাওয়ায় শঙ্কা আরও বাড়ছে।শনিবার রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানান।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৬.৯৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ। আর গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে ময়দার দাম ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। খোলা ময়দার দাম গত বছরের এই সময়ে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।

এখন রাজধানীতে খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই ময়দার দাম ছিল ৬৮ টাকা কেজি। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্যাকেট ময়দার দাম ছিল ৭৭ টাকা কেজি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮২ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহের ৬৮ টাকা কেজি দরের খোলা ময়দা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৬.৯৬ শতাংশ।

রাজধানীর আজিমপুর এলাকার সজিব জেনারেল স্টোরের দোকানি মো. জামিল বলেন, আটার দাম বেড়ে গেছে। এখন ১ কেজি আটা ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়। আমরা আটার বস্তা কিনতে পারছি না, তাহলে সাধারণ মানুষ কিনবে কি করে।আটা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আটার দাম বেশি তাই রাখি না। আবার কোম্পানিও ছোট দোকানে দিতে চায় না। কখন আসে বোঝা যায় না। এসে বড় দোকানগুলাতে আটার ১২-২৪ পিসের বস্তা দিয়ে চলে যায়। আমাদের দোকান ছোট বলে তাদের আগ্রহ কম।’

রাজধানীর জিগাতলার শাহিন স্টোরের দোকানি শাহিন মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে দোকানে আটা রাখি না। কারণ আটার যে দাম, আটা রাখলে অন্যান্য জিনিস রাখার টাকা থাকে না। আমাদের মতো যারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে এখন তাদের রাস্তায় বসার উপক্রম। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি খরচ বহন করে আর লাভ থাকে না। সব মিলিয়ে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া আর কেউ ভালো নেই।হাজারীবাগের বাসিন্দা শফিক শাহজাহান বলেন, ‘আটা কিনতে গিয়েছিলাম। এক কেজি আটার দাম ৮০ টাকা, দাম শুনে চলে আসছি। এখন আমাদের কী করার আছে। আমাদের এখন বেঁচে থাকাটাই বড় যুদ্ধ।’

এদিকে বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটের কারণে গমের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল কয়েক মাস ধরে। এর মধ্যে মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে রেকর্ড উচ্চে দাঁড়ায় । সেখান থেকে বর্তমানে কিছুটা কমে এলেও এখনো স্থিতিশীলতা ফেরেনি বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারের এ অস্থিরতার কারণেই দেশের বাজারে গম ও গমজাত পণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, গত অর্থবছরেও দেশে গম আমদানি হয়েছে চাহিদার চেয়ে কম। এতে বাজারে এখন গমের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এরই প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার উৎপাদন খরচে, যার ধারাবাহিকতায় গত কয়েক সপ্তাহে দেশের বাজারে আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে মণপ্রতি কয়েকশ টাকা।

আটা ও ময়দা তৈরি হয় গম দিয়ে। বাংলাদেশে প্রতি বছর গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ লাখ টন। চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের চাহিদার সিংহভাগ গম আমদানি করা হয় রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে প্রভাব পড়ে গম আমদানিতে। ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশের গমের বাজারে দাম বাড়তে থাকে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২০ নভেম্বর ২০২২ /এমএম