Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে আগুন রঙের রসালো ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই চমৎকার। লিচুর রঙে আর স্বাদে মন জুড়ায় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর।লাল টুসটুসে রসাল ও মিষ্টি লিচুর স্বাদ এই গরমে আরাম দেয়। জিভে জল আনা এই ফল স্বাদগ্রন্থিতে উদ্দীপিত করে তা নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। স্বাদ ও গন্ধের জন্য লিচু অনেকের কাছেই প্রিয়। রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ত্বকের সুরক্ষাতেও লিচু দারুণ কার্যকর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমকালে শরীরকে চাঙ্গা ও সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ডায়েটে রাখবেন এই ফল। অনেকে মনে করেন, লিচু বেশি খেলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। কথাটি সত্য। তবে সঠিক নির্দেশিকা মেনে লিচু খেলে এই ফলের বিকল্প কিছু হয় না।

রসালো ফল লিচুর প্রথম সন্ধান পান চীনা বিজ্ঞানী লাই চি। অনেকে মনে করেন, লাই চি থেকেই লিচু নাম এসেছে। লিচু ফল নিয়ে পৃথিবীতে প্রথম বই লেখা হয় ১০৫৬ সালে। বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল হিসাবে লিচুকে গণ্য করা হয়। যুগে যুগে রাজা-বাদশাহরা তাদের রানি বেগমদের মন জয় করার জন্য লিচু উপহার দিতেন। অষ্টম শতকে চীনা সম্রাট হুয়ান সাং দক্ষিণ চীন থেকে লিচু নিয়ে গিয়ে উত্তর চীনে সম্রাজ্ঞীকে উপহার দিয়েছিলেন। লিচুর ইংরেজি নাম লিচি। লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম লিচি চাইনেন্সিস।

লিচু দক্ষিণ-পূর্ব চীনের কুয়াংতুং এবং ফুচিয়েন প্রদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া মহাদেশের চীন, ইন্দোচীন, থাইল্যান্ড, জাপান, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, ভারত, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও আমেরিকার ফ্লোরিডাতে লিচু চাষ হয়।

বাংলাদেশে রাজশাহী, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, ঢাকার সোনারগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামসহ আরো কয়েকটি জেলায় লিচুর চাষ হয়।লিচু গাছ একটি লম্বা চিরহরিৎ গাছ। এই গাছ থেকে রসাল শাঁসযুক্ত ছোট ছোট ফল পাওয়া যায়। ফলটির বহিরাবরণ অমসৃণ ও লালচে গোলাপি বর্ণের; যা খাওয়া যায় না। আবরণটির ভেতরে থাকে সুমিষ্ট রসাল শাঁস। বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবারের সাথে এটি পরিবেশন করা হয়।

বিজ্ঞানীরা নানা জাতের লিচু উদ্ভাবন করেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটও বের করেছে লিচুর তিনটি জাত। এ দেশে যেসব জাতের লিচু পাওয়া যায় সেগুলো হলো বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-৩, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফ্ফরপুরী, বেদানা লিচু, বারি লিচু-১, বারি লিচু-২, বারি লিচু-৩ ইত্যাদি। বোম্বাই লিচু টকটকে লাল, মাদ্রাজি আগাম জাত, সবচেয়ে ভালো জাত চায়না-৩। এই জাতের গাছে প্রতি বছরই ভালো ফল ধরে।

১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ গ্রাম ক্যালোরি, ০.৪ গ্রাম প্রোটিন, ১.৩ গ্রাম ফাইবার, ১৫.২ গ্রাম চিনি, ০.৩ গ্রাম ফ্য়াট, ১৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, কপার, পটাসিয়াম। রসালো ফল লিচুর ফাইবার, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও চিনির মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত খেলে কীভাবে শরীরকে সুস্থ রাখে, তা একঝলকে দেখে নিন…

ওজন কমানো

বেশি পরিমাণে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকা সত্ত্বেও, নিয়মিত লিচু খাওয়া ক্লান্তি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওয়ার্কআউটের পরে এবং পেটের জেদি চর্বিও কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

লিচুতে রয়েছে অলিগোনল নামের একটি উপাদান। লিচু শরীরকে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে

যাদের শরীরে রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে, তারা প্রতিষেধক হিসেবে লিচু গ্রহণ করতে পারেন। লিচুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

যাদের শরীরে রক্ত নালীতে রক্তচাপ বেড়ে যায় বা প্রেশার বারবার উঠানামা করে, তারা খাবারের তালিকায় নিয়মিত লিচু রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ লিচুর রসের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে কাজ করে। ফলে রক্তচাপ কমিয়ে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ক্যানসার থেকে মুক্তি দেয়

লিচুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে লিচু স্তন ক্যানসার ঠেকাতে বেশ কার্যকর।

হৃদ্‌যন্ত্রের খেয়াল রাখে

দেহের হৃদ্‌যন্ত্রকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত লিচু খেতে হবে। লিচুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি হৃদ্‌যন্ত্রের কাজকে সক্রিয় রাখে।

পেটের সমস্যায় মুক্তি

লিচু হজম শক্তি উন্নত করে। এতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকে। যা হজমের জন্য কাজ করে। গরমে আমাদের পেটে নানা সমস্যা হয়। লিচু খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

চোখের ছানি পড়া দূর করে

লিচু আপনার চোখ জোড়াও যত্ন নিবে। এটি খেলে চোখের ছানি পড়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। লিচুতে রয়েছে বিশেষ ফাইটোকেমিক্যাল।যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও চোখের সুরক্ষার জন্য দরকারী। যা চোখে ছানি পড়াও আটকাতে সাহায্য করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে

লিচুর রস ব্যবহার করে ত্বকের কালচে দাগ দূর হয়। এমনকি রোদে পোড়া ত্বকের ট্যান দূর করতেও লিচুর রস কার্যকর। লিচু রস মুখে লাগিয়ে নিলেই উপকার মিলবে। তাছাড়া এটি ত্বকের বলিরেখাও দূর করবে।

সতর্কতা

লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি হতে বাধা দেয়। যে কারণে শিশুরা খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরের শর্করা কমে শিশুর বমি ও খিঁচুনি হয়। অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২২ মে  ২০২২ /এমএম