প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ। এতে কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে তাদের। সামনের দিনগুলোতে কি হবে তা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বাজারে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা হয়। পকেটভর্তি টাকায় এখন ব্যাগভর্তি বাজার মিলছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। প্রায় প্রতিদিনই নানা অজুহাতে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ব্যাবসায়ীরা। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না নিত্যপণ্যের বাজার।বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যেল ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারি এজেন্সি, জেলা প্রশাসক ও বাজার মনিটরিং টিমগুলোকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোন দোকানে কম দামে পণ্য মিলবে সেই দিকে ছুটছেন ক্রেতারা। অনেকে দোকানিদের সঙ্গে দর কষাকষিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ বাজারের ব্যাগ বগলদাবা করে হিসাব করছেন কি কিনবেন আর কি বাদ দেবেন। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে (বিএনপি বাজার) এক সপ্তাহ পর বাজার করতে এসেছেন মোমিনুল শেখ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন তিনি। মোমিনুল বলেন, এক মাস কাজ করার পরে যে টাকা পাই, তাতে সংসারের ২০ দিনের বাজারও হয় না। এর সঙ্গে বাসা ভাড়াসহ আরও কত খরচ আছে। পকেটভর্তি টাকাও এখন বাজারের ব্যাগ ভরছে না। এ কারণে অনেক কিছু না কিনেই ফেরত যেতে হয়।
হাসান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে যে দাম! এভাবে চলতে থাকলে তো একটা সময় না খেয়ে মরতে হবে। যা কিছুই কিনতে যাই দাম বেশি। কীভাবে বাজার করবো। পেট চালাতে গেলে বাজার তো করতেই হবে। আর বাজার না করলে না খেয়ে থাকতে হবে। কী করবো তাও বুঝতে পারছি না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সব কিছুর এত দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে। এরাই সবকিছুর দাম বাড়ায়। সব দোকানি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে কোথাও কম দামে পণ্য পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়।তবে ক্রেতাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন বিক্রেতারা। তাদের অভিযোগ বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও বেশি দামে করতে হচ্ছে।
বিক্রেতা মাহবুব রহমান বলেন, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হয়েছে। এখন কমদামে বেচবো কেমন করে কন। আমরাও তো কিছু লাভের আশায় ব্যবসা করি। আমাদেরও তো ছেলে-মেয়ে আছে, সংসার আছে।এমন পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্য সঠিক দামে বিক্রি হচ্ছে কি না এবং ক্রেতাদেরকে দোকানিরা পাকা রসিদ দিচ্ছেন কি না, সেটি তদারকিতে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং বোর্ড। শুক্রবার সকালে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযানে নামেন কর্মকর্তারা।
পরিদর্শন শেষে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফিরোজ আল মামুন বলেন, বেশিরভাগ দোকানে বিক্রয় মূল্য লেখা থাকলেও ক্রয়মূল্য লেখা নেই, যেটা আইনবিরোধী। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের দেখানো বেশিরভাগ রসিদেই অসঙ্গতি দেখা গেছে। তবে যারা একেবারেই রসিদ দেখাতে পারেননি তাদের জরিমানা করা হয়েছে।সচিব বলেন, ১০ থেকে ১৫টি আড়ৎ ঘুরে বেশিরভাগ আড়ৎকে সতর্ক করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি আড়ৎ রসিদ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১২ মার্চ ২০২২ /এমএম





