Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বৈশাখের ঝড়ে ঘর ভাঙে। গাছ উপড়ে পড়ে। বাংলার গ্রামীণ জীবনে এটি এক চেনা ছবি। শহুরে জীবনে বৈশাখের ঝড়ে ঘর ভাঙার ভয় খুব কম মানুষের। তবে এবার ঘর ভাঙার নয় ভয়টা ঘর উজাড় হওয়ার। বছর শুরুর আগেই মহামারি হয়ে আবির্ভাব হয়েছে করোনা ভাইরাস নামের এক ঝড়ের। যার নাম শুনলেই এখন শিউরে উঠছে পুরো বিশ্ববাসী। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে এই ভাইরাসের ছোবল সবচে বেশি। ফলে ঢাকায় বসবাস করা মানুষের বেশির ভাগই ঘর ছেড়ে বাইরে খুব একটা আসছেন না।

গত ২৪ মার্চ থেকে দেশব্যাপী ঘোষণা করা সাধারণ ছুটি পাঁচ দফা বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত লম্বা করা হয়েছে। খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশও আছে সরকারের পক্ষ থেকে। ঘরবন্দি মানুষের অনেকেই ঘরে থাকতে থাকতে হাফসে উঠেছেন। খুঁজে বেড়াচ্ছেন সময় কাটানোর পথ।আধুনিক সভ্যতার কল্যাণে সিংহভাগ মানুষের হাতেই স্মার্টফোন। বেশির ভাগ মানুষই সময় কাটাচ্ছেন মোবাইল ফোনের নানা অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে। তবে কিছুটা ভিন্নতাও আছে। কারণ আধুনিকতার ভাইরাস বাঙালিকে এখনো পুরোপুরি গ্রাস করতে পারিনি। যার প্রমাণ মেলে ঢাকার আকাশে।

প্রতিদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই ঢাকার আকাশ ছেয়ে যায় নানা রঙের ঘুড়িতে। ঘরে বসে অলস সময় কাটানো মানুষগুলো দৌড়ে যান নিজ নিজ বাসার ছাদে। হাতে তুলে নেন নাটাই-ঘুড়ি। সুতো ছাড়তে ছাড়তে অনেকেই আনমনে ঘুড়ি হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন। খুঁজে বেড়াচ্ছেন বাঙালিয়ানা, কারো কারো চোখে ভেসে উঠছে গ্রাম্য শৈশবের হাজারো স্মৃতি।যারা ঘুড়ি উড়াতে পারেন না বা সুযোগ নেই, তারা বাসার ছাদ থেকে দেখছেন অন্যদের ঘুড়ি ওড়ানো। প্রতিদিন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা গুনতে গুনতে অনেকটা ক্লান্ত মানুষগুলোর চোখে–মুখে একটা আনন্দ বয়ে আনে এই ঘুড়িময় বিকেল। রঙিন ঘুড়ি মুগ্ধ করে ইট-পাথরের শহরে বন্দি মানুষগুলোকে।ঢাকার বিভিন্ন এলাকার আকাশে দিকে তাকালে দেখা যায়, নানা রঙ, নানা ঢংয়ের ঘুড়ি উড়ছে। ঘুড়িগুলো যেন বাতাসের সঙ্গে খেলায় মেতেছে। কোনো কোনো ঘুড়ি মেঘ ছুতে চায়, কোনোটাবা সুদূর নীলাকাশ।

ঢাকার আকাশ জুড়ে শোভা পাওয়া এসব ঘুড়ির বেশির ভাগই ঘরে তৈরি। কেউ পলিথিন, কেউবা ঘুড়ি তৈরি করেছেন কাগজ দিয়ে। এখানেও আছে বৈচিত্র্য। পলিথিনের ঘুড়ির ক্ষেত্রে তাতে দেওয়া হচ্ছে নানান আকার। দূর থেকে মনে হতে পারে, কোনো এক অচেনা পাখি আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। আবার কাগজের ঘুড়ি তৈরিতে অনেকেই ব্যবহার করছেন রঙিন কাগজ। কেউবা তাতে আবার যুক্ত করছেন বাহারি নকশা।এসব রঙ ও ঢংয়ের ঘুড়ি যারা উড়াচ্ছেন কেবল তারা আনন্দ পাচ্ছেন বা তাদের সময় কাটছে এমনটি নয়। ঘরবন্দি মানুষগুলো বারান্দা, জানালা, ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছেন এসব ঘুড়ি। ডানপিটে শৈশবের স্মৃতি মনে করে নস্টালজিক হয়ে পড়ছেন।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ৩০ এপ্রিল ২০২০/এমএম


Array