Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  সমুদ্রে জেগেছে ভয়ানক দানব! এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ডানা। ঘূর্ণিঝড় ডানা সম্পর্কে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি আগামী ২৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ২৪ অক্টোবর সকালে এটি বঙ্গোপসাগরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা উপকূলে পৌঁছাতে পারে।২২ অক্টোবর সকালে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর ২৪ অক্টোবর পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগরে এটি ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত হবে। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছাবে। উপকূলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।

সংস্থাটি সতর্কবার্তায় জানায়, ২১ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দামান সাগর উত্তাল ও ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজমান থাকবে। ওই সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪০ এবং ঝড়ো হাওয়ার গতি ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে বঙ্গোপসাগর ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তাল ও সেখানে ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজমান থাকতে পারে। ওই সময় বাতাসের গতি ৪৫ থেকে ৫৫ কিলোমিটার হতে পারে। এরপর ২৪ থেকে ২৫ অক্টোবর উত্তর বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল হয়ে উঠতে পারে।২১ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দামান সাগর, ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং ২৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরতে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। এছাড়া জাহাজ, বন্দর, সাগর ও উপকূলে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর উপরে। সম্ভব্য এই ঘুর্ণিঝড়টির কারণে পুরো বাংলাদেশের উপরে ৪ থেকে ৫ দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে।আবহাওয়াবিদদের মতে, সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা যে সময়ে বাংলাদেশে আঘাত করতে যাচ্ছে, সেই সময় বাংলাদেশের কৃষকরা আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই, ২২ অক্টোবরের মধ্যে জমিতে পাকা ধান থাকলে, তা কেটে মাড়াই করে গোলায় উঠাতে হবে। নাইলে, এগুলো নষ্ট হবে।

ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডানা’। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে কাতার। এই ‘ডানা’ নামের অর্থ মুক্ত বা স্বাধীনতা। তবে এই ঘূর্ণিঝড় কোথা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে অথবা কোথায় এটির ল্যান্ডফল হবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।সাগরে নিম্নচাপের সময় বাতাসের প্রচণ্ড ঘূর্ণায়মান গতির ফলে সংঘটিত বায়ুমণ্ডলীয় উত্তাল অবস্থাকে সংক্ষেপে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের এই একটানা ঘূর্ণায়মান গতি যখন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায়, তখনই এর নামকরণ করা হয়। আটলান্টিক মহাসাগর ও এর আশপাশের অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারে উঠে গেলে নিম্নচাপ ঝড়ে পরিণত হয়। আর এ সময়ই ঘূর্ণিঝড়টিকে একটি নাম দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

Q, U, X, Y ও Z- এই ৫টি অক্ষর বাদ দিয়ে ইংরেজি বর্ণমালার ২১টি অক্ষর ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। এগুলো সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হয়। তবে কোনো বছর যদি ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়, তবে নামগুলোর সঙ্গে গ্রিক বর্ণমালা যুক্ত করা হয়। নামকরণের পদ্ধতি অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটির অধীনে মোট ৫টি আঞ্চলিক সংস্থা তাদের স্ব স্ব অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে। এগুলো হলো- ইএসসিএপি (ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক) বা ডব্লিউএমও (বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা) টাইফুন কমিটি, ডব্লিউএমও বা ইএসসিএপি প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোন, আরএ (রেজিওনাল অ্যাসোসিয়েশন) ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটি, আরএ-৪ হারিকেন কমিটি, আরএ-৫ ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটি।ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে ১৩টি দেশ। সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ওমান, ইরান, সৌদি আরব, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার।

ডব্লিউএমওর অংশ হিসেবে উত্তর ভারতীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করে থাকে- আরএসএমসি, ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ওয়ার্নিং সিস্টেমস (টিসিডব্লিউএস) ও ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)।ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের পেছনে মূল কারণ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জনসাধারণের সতর্কতা। এই উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বাতাসের গতিবিধি ও আসন্ন দুর্যোগ নিয়ে গবেষণা করা হয়ে থাকে। এই গবেষণায় ঝড়ের তীব্রতা এবং একাধিক ঝড়ের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে এগুলোর নামকরণ।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৪ অক্টোবর ২০২৪ /এমএম