বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বর্তমান সময়ে একটি আতঙ্কের নাম হলো মশা। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ম্যালেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের বাহক হচ্ছে এই মশা। প্রযুক্তির আশীর্বাদ আমাদের দৈনন্দির জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকলেও মশা নিধনে প্রযুক্তি তেমন বেশি অগ্রসর হতে পারেনি। যদিও মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও বেশ কিছু কার্যকর উপায়ও উদ্ভাবন হয়েছে ইতিমধ্যে। মশার উত্পাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে এমন কয়েকটি প্রযুক্তি নিয়েই সাজানো হয়েছে এ লেখাটি। চলুন প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
জিন এডিটিং প্রযুক্তি
ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মতো মশা বাহিত রোগ সঠিক চিকিত্সায় সেরে যায়। তবে অনেক সময় উন্নয়নশীল দেশে সঠিক ওষুধ ও সঠিক নিয়মে চিকিত্সা না হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিষয়টি অনুধাবন করে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মশা রোধে একটি বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট রোধে তাঁরা সিআরআইএসপিআর জিন এডিটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। সিআরআইএসপিআর বা ক্যাশ ৯ জিন এডিটিং পদ্ধতিতে মশার ম্যালেরিয়ার জিন সরিয়ে ফেলা হয়। ইতিমধ্যে এ পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছেন তাঁরা। এতে তাঁরা দেখেছেন, মশার শরীরে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট মানুষের জন্য ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে তা নষ্ট হয়ে যায়। তবে এ পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে সংশয়ও তৈরি হয়েছে। এ ধরনের জিন এডিটিং পদ্ধতি প্রয়োগে যদি কোনো বাজে ফল আসে বা দুর্বৃত্তের হাতে প্রযুক্তি চলে যায় তখন কী হবে? এ প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন সামনে আসবে।
মশা শনাক্তের অ্যাপ
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি অ্যাপ তৈরি করছেন, যা মেশিন লার্নিং পদ্ধতি অ্যাকুয়াস্টিক শব্দ ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির মশা শনাক্ত করতে পারে। এ অ্যাপের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশা শনাক্ত করতে পারে। এ প্রজাতির মশা ম্যালেরিয়া ছড়াতে পারে। গবেষকরা দাবি করেন, অ্যাপের মাধ্যমে অ্যানোফিলিস মশা শনাক্তের সফলতার হার ৭২ শতাংশ। এ প্রকল্প আরো বিস্তৃত করতে গবেষক দল আরো বেশি মশার আরো উচ্চমান সম্পন্ন শব্দ রেকর্ড করছেন, যাতে ৩ হাজার ৬০০ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা সম্ভব। এ অ্যাপের মাধ্যমে মশা বাহিত রোগ দূর করা সম্ভব না হলেও সম্ভাব্য রোগ বাহিত মশা সম্পর্কে ধারণা দেবে।
ড্রোন ডাম্পিং
মশা মারতে কী লাগবে? মশা মারতে যদি আরো মশা ছাড়া হয়, তবে কেমন হবে? অদ্ভুত শোনালেও অপ্রচলিত এমনই এক ধারণার কথা জানিয়েছে রোবট নির্মাতা কোম্পানি উইরোবোটিকস। তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী, জীবাণুমুক্ত মশা ড্রোনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মশাযুক্ত এলাকায় ছাড়া হবে। এতে পুরুষ মশার সংখ্যা কমিয়ে মশার প্রজনন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। মশার বিস্তার ঠেকাতে বিশেষ ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পুরুষ মশার সংখ্যা বৃদ্ধিতে ড্রোনের ব্যবহারের প্রযুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যে পরীক্ষা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রিস্টব্যান্ড
মশা থেকে মারাত্মক ভাইরাস ছড়ালেও ক্ষুদ্র এ প্রাণীটি বড়ো ঝড়ের পূর্বাভাস বুঝতে পারে। তখন তারা দূরে সরে যায়। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সংকেত দিয়ে মশার মস্তিষ্কে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। এতে মশার কামড় থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া যায়। এ রকম ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সংকেত দিতে সক্ষম রিস্টব্যান্ড তৈরি করেছে নোপিক্সগো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের তৈরি ডিভাইসে দুর্বল তরঙ্গ তৈরি হয়, যা মশাকে ঝড়ের সংকেত দেয়। এতে মশা দূরে চলে যায়।
ফোটোনিক ফেন্স
মশা থেকে সুরক্ষায় মশারির ব্যবহার সর্বত্র। কিন্তু গবেষকরা মশা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে একটি ফোটোনিক জাল তৈরি করেছেন। এটি মূলত লেজারের বিশেষ জাল। অনেকটাই চলচ্চিত্রের কাহিনির মতো। মশার হাত থেকে রক্ষায় বিশেষ জাল আকারের লেজার রশ্মি ছোড়া হয়। একে ‘ফোটোনিক ফেন্স’ বলে। ২০১০ সালে টেড টকের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা নাথান মারভোল্ড ফোটোনিক ফেনে্সর কথা বলেন। মশার পাখার আওয়াজ শুনে স্বল্পশক্তির লেজারের মাধ্যমে তা মেরে ফেলা বা পুরোপুরি অকার্যকর করে ফেলতে সক্ষম এ পদ্ধতি। ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো কার্যালয়ে এ যন্ত্র স্থাপন করে মশা শনাক্ত করা মাত্রই তা চালু করলে ৯৯ শতাংশ মশা মারা সম্ভব। তবে প্রায় এক দশক আগে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো এ পদ্ধতি প্রচলিত হয়ে ওঠেনি। অবশ্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের কাছ থেকে এ প্রযুক্তির লাইসেন্স নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগও এতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
কিলার মশা
যখন কোনো উদ্যোগে ঠিকমতো কাজ হয় না, তখন জেনেটিক পদ্ধতিতে বিশেষ প্রকৌশলে তৈরি কিলার মশা মাঠে নামানো যায়। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানটাকিভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি ‘মসকিউটোমেট’ এ ধরনের কিলার মশা উত্পাদন করেছে। তাদের প্রকল্পে পুরুষ মশাকে মশা মারার কীটনাশকবাহী হিসেবে তৈরি করা হয়। এসব মশা যখন নারী মশার সঙ্গে মিলিত হয়, তখন মশার ডিম ফোটে না। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছর এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালানো হয়েছে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ০১ আগস্ট ২০১৯/ এমএম