Menu

বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং কোন পথে?

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: পরিবহন খাতে দখিনা বাতাস বইতে শুরু করে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি এ দেশে রাইড শেয়ারিং সেবার সূচনা হওয়ার পর থেকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে কয়টি বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার মধ্যে রাইড শেয়ারিং অন্যতম।

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় উবার, দেশীয় উদ্যোগ পাঠাও, পিকমি ও সহজের মতো প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব সম্ভাবনার আকাশে পরিবহন খাতে শৃংখলার স্বপ্ন দেখায়। রাজ্যের ব্যস্ততা নিয়ে ঢাকার ব্যস্ত সড়কে চলতে শুরু করে রাইড শেয়ারিং সেবা। দুয়ার খোলে পরিবহন খাতের আধুনিকতার।

আলোচনা ও সমালোচনায় মাঝে মাঝে খবরের শিরোনাম হয় এই সেবাখাত। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা এ সেবাকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবুও সমালোচনার বোঝা ও বিপুল ভর্তুকি দিয়ে টিকে থাকার স্বপ্ন দেখে প্রতিষ্ঠানগুলো।

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ধীরে ধীরে বদলে যায় গতানুগতিক পরিবহন ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণা। সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয় অসুস্থ পরিবহন সংকট থেকে। রাইড শেয়ারিং সেবায় অভ্যস্ত হতে থাকে এ শহরের মানুষ, যার ফলস্বরুপ দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ সেবাখাত।

নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষ করে রাইড শেয়ারিং সেবাখাতে শৃঙ্খলা আনয়নে ‌‌রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা– ২০১৭ প্রণয়ন করে সরকার। সরকার ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ইং তারিখে এই নীতিমালা অনুমোদন করে যা ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ইং তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ইং তারিখে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

জনস্বার্থে জারিকৃত এই নীতিমালা ৮ মার্চ ২০১৮ইং তারিখ হতে কার্যকর রয়েছে। যার আলোকে গত পহেলা জুলাই ২০১৯ ইং তারিখে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পিকমিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রথম এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট প্রদান করে এ খাতে গতি সঞ্চার করে।

রাজ্যের স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে প্রায় ৩ হাজার স্নাতকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ও তাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে, এক লাখ চালকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে অবদান রাখা, অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তীব্র আয়-বৈষম্য কমাতে ভূমিকা রাখা, বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করা, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা তথা তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে গতানুগতিক পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকরণে কাজ করে যাচ্ছে।

কিন্তু দ্রুত মার্কেট শেয়ার দখলের জন্য অসুস্থ প্রমোকোড, কোয়েস্ট বোনাস ও চালকের কাজ থেকে প্রাপ্ত কমিশন মওকুফের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কর্মবিমুখ মোটরযান চালক যখন কর্মসংস্থানের একটি নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম পেল ঠিক তখনি অ্যাপভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে খ্যাপে রাইড শেয়ারে উদ্বুদ্ধের পথ বেছে নিচ্ছে তারা।

শুরুতে এটি নিয়ম মেনে অ্যাপের ভিত্তিতে পরিচালিত হলেও এখন একশ্রেণির অসাধু চালকের বেশি আয়ের আশায় এটি প্রায় ভেঙে পড়েছে। অ্যাপ রেখে এখন তারা ‘খ্যাপে’ ঝুঁকছে। চুক্তিতে গন্তব্যে যাত্রী পৌঁছে দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে, যা দিন দিন বাড়ছে। এতে বাড়ছে নানারকম হয়রানি ও নিরাপত্তার ঝুঁকি।

কোনো নির্জন স্থানে নিয়ে চালক যেমন যাত্রীর ক্ষতি করতে পারে, তেমনি চালকও যাত্রীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কারণ অ্যাপ ছাড়া যাত্রী তোলায় কে উঠছে সেই তথ্য থাকছে না কোথাও। ভাড়াও গুনতে হচ্ছে বেশি। তার ওপর যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে পৌঁছাতেও আপত্তি থাকে চালকদের।

গত ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। মিলন নামে এক বাইকারকে খুন করে তার মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে গেছে একজন দুর্বৃত্ত। পুলিশ বলছে, খুনি যাত্রীবেশে মিলনের বাইকে চড়েছিল। কিন্তু তারা এখনও খুনিকে শনাক্ত করতে পারেনি। যদি অ্যাপের মাধ্যমে ভাড়ায় ওই যাত্রীকে নেয়া হতো, তাহলে তার নাম-পরিচয়সহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া সহজ হতো।

কিন্তু চুক্তিতে তাকে তোলায় কোনো তথ্যই নেই কারো কাছে। ফলে নানারকম হয়রানির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন হচ্ছে দেশের রাইড শেয়ারিং আসলে কোন পথে?

সম্ভাবনাময় এই সেবা খাতকে টিকিয়ে রাখতে যে বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-অফলাইনে রাইড শেয়ারিং বন্ধের জন্য অংশীজনদের বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব নিতে হবে, রাইড শেয়ারিং সেবার অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে, চালকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে ই-প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতে হবে,রাইড শেয়ারিং-এ কর-ভ্যাট অব্যাহতি দিতে হবে, এ খাতের জন্য একটি আলাদা ভাড়া কাঠামো থাকতে হবে, অসুস্থ প্রমোকোড, কোয়েস্ট বোনাস বন্ধ করতে হবে নতুবা এই সেবাখাতের সলিলসমাধি হবে।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৩ অক্টোবর ২০১৯/ এমএম


Array