Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া হতেই পারে। তবে এই ঝগড়ার নেতিবাচক প্রভাবে পড়তে পারে সন্তান। বাড়ির শিশুরা মনোযোগী হয়ে থাকে। তাই তাদের মনের ওপর যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ছাপ ফেলে অনেক বেশি। এই সময় সন্তানদের মানসিক ক্ষতি কেমন হয় এবং বাবা-মা এ ক্ষেত্রে কী করতে পারেন এ বিষয়ে বিশ্লেষণ করছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড, অ্যাডলসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। শুনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে তার পরামর্শগুলো।

শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ প্রকাশ পায়
যেকোনো শিশুর কাছেই বাবা-মা অনুকরণীয়। কিন্তু যখন সে বাবা-মাকে ঝগড়া করতে দেখে তখন সে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বাবা-মার ঝগড়া প্রলম্বিত হলে অনেক শিশুর মধ্যে হিংস্র, ঝুঁকিপূর্ণ বা অপরাধী আচরণ প্রকাশ পায়। বাবা-মা একে অপরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিলে শিশুর মানসিক, আবেগ অনুভূতি, আচরণ এবং সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রেও তখন সমস্যা হতে পারে।

মানসিক শক্তি কমে যেতে থাকে
বাচ্চারা বাবা-মার সম্পর্কে শীতলতা সহজেই ধরতে পারে। পরিবারে যে বাবা-মার দ্বন্দ্ব রয়েছে শিশুরা বুঝতে পারে। একটি শিশু ছয় মাস বয়স থেকেই পারিবারিক অশান্তি অনুভব করতে পারে। যদিও সে প্রকাশ করতে পারে না। পরিস্থিতি এমন হলে তার মানসিক ভিত্তিও যে খুব দৃঢ় হবে এমন নয়।

ব্যাঘাত ঘটে সন্তানের ঘুমে
বাবা-মায়ের ঝগড়ার কারণে সন্তানদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বাচ্চাদের মস্তিষ্কের প্রাথমিক বিকাশ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয়, স্কুলে তার আচার-আচরণে সমস্যা হতে পারে। শিশু বিষণ্নতায় ভুগতে পারে এবং পড়াশোনায় অমনোযোগিতা দেখা যেতে পারে। অনেক সময় ছেলেমেয়ে যদি একটু বড় হয় তাহলে তাদের মধ্যে নিজের ক্ষতি নিজে করা প্রবণতা দেখা যায়।

মানসিক ডিপ্রেশন থেকে অপরাধ-প্রবণতা
পারিবারিক কলহের মধ্য দিয়ে যে ছেলে সন্তান বড় হয়, বড় হওয়ার পর তার মাদকাসক্তি, অবাধ্যতা, মারামারি করার প্রবণতা বেশি রাখা যায়। অপরদিকে কন্যা শিশুরা চাপা স্বভাবের হওয়ার কারণে ভেতরে তারা চাপ অনুভব করে এবং অস্থিরতা দেখা যায়। পরে তাদের মধ্যে সংসারের ভয়, ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

ঝুঁকি বেশি টিনএজারদের
পরিবারের দাম্পত্য কলহের নেতিবাচক প্রভাব শিশুদের তুলনায় টিনএজারদের ওপর বেশি। এই বয়সে ভালোমন্দের বোধের জন্মটাও ইতোমধ্যে হয়ে যায়। ফলে আতঙ্কিত হয়ে বাবা-মায়ের ঝগড়া থামাতে নিজেরাই উদ্যোগী হয় তারা অনেক সময়। একটু বড় হওয়া সন্তান নিজের ক্ষতি নিজে করতে চায়, অনেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে যেতে পারে, নিজের ইচ্ছাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সন্তানের ওপর যে পারিবারিক কলহের প্রভাব পড়ছে এই সম্পর্কে কিন্তু সব বাবা-মা অবগত থাকেন। ছোটখাটো ঝগড়ার পর বাবা-মায়ের সমঝোতা সন্তানকে প্রশান্তি দেয়। এই যে বাবা-মা কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক করেন এবং সমাধান করে ফেলেন এটা থেকেও শিশুরা ভালো শিক্ষা নিতে পারে। নিজেদের জীবনের এই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারে।

সন্তান ট্রমার শিকার
দাম্পত্য কলহের সমস্যাগুলো কাটাতে না পারলে সন্তান ট্রমার শিকার হতে থাকবে প্রতিনিয়ত। ঝগড়ায় দু’জনের একজন আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। অনেক সময় ভিকটিম রোল প্লে করার প্রবণতাও দেখা যায়। এদিকে সন্তান ভয় পাচ্ছে আর অসহায় বোধ করছে। এজন্য ঝগড়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন এই জিতে যাওয়ায় আসলে আপনার কতটুকু লাভ হচ্ছে? পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে বাচ্চাকে কখনোই যেকোনো একজনের পক্ষ নিতে বাধ্য করবেন না। সংঘর্ষের পথে না গিয়ে চেষ্টা করুন ধৈর্য ধরে কথা বলার। সন্তানদের সামনে কখনোই তর্কে জড়ানো উচিত নয়। পরিস্থিতি যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় তবে বাচ্চাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। ঝগড়ার আগে চিন্তা করুন আশপাশের মানুষদের ওপর কী ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। নিজেদের কিছু ভুলের জন্য আপনার সন্তানের সুন্দর শৈশব যেন ট্রমা না হয়ে যায়।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৪ জুন ২০২৪ /এমএম