বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: চার লেন তৈরির অল্প সময়েই সংস্কার করতে হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক। ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে দ্রুত নষ্ট হয়েছে বলেই এটি করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ জন্য ‘চার লেনে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) (দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশ)-এর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী চার বছরের জন্য পারফরমেন্স বেজড রক্ষণাবেক্ষণ ও পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সড়কটির পূর্ণ উপযোগিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপদ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে উন্নত, নিরাপদ, টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই প্রকল্পটির অনুমোদন বিবেচনাযোগ্য।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১০ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। তাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ রক্ষাকারী জাতীয় অর্থনীতির লাইফলাইন এই মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্ত ভারবাহী পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল করছে। ক্রমবর্ধমান পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনের জন্য মহাসড়কটির পূর্ণ উপযোগিতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা প্রয়োজন।
অধিক সংখ্যক এবং অননুমোদিত ভারবাহী যান চলাচলের কারণে মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত ভারবাহী যান চলাচলের জন্য সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি থেকে চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কটি রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণে ৫ বছরের জন্য পারফরম্যান্স-বেজড রক্ষণাবেক্ষণ ও পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ শীর্ষক একটি প্রকল্প সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৯৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। তখন মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এটির অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে সম্মতির জন্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটি নেয়ার যৌক্তিকতা নিরূপণের জন্য ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধানের নেতৃত্বে বুয়েটের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনের ওপর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার সুপারিশ অনুযায়ী সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে মহাসড়কটির কোর কাটিং পরীক্ষা করে কমিটির প্রতিবেদন গত ৭ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কমিটির কার্যক্রম চলমান থাকাবস্থায় সড়ক পরিবহন আগের প্রকল্প প্রস্তাবের পরিবর্তে ৫০০ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুনে চার লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ৪ বছরের জন্য পারফরম্যান্স-বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
সর্বশেষ প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর চলতি বছরের ১০ জুন পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সড়ক পরিবহন বিভাগ গঠিত কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন ও প্রাপ্ত ডিপিপি পর্যালোচনা করা হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৭৭ হাজার ৮৯০ দশমিক ৬৮ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ৩৭ দশমিক ৭১৯ লাখ বর্গমিটার ট্যাক কোট, ১ দশমিক ৮৬৮ লাখ ঘনমিটার ওয়্যারিং কোর্স, ১ দশমিক ২১৯ লাখ বর্গমিটার রোড মার্কিং, ১৪ দশমিক ৩২৩ লাখ বর্গমিটার রাট কারেকশন বাই মিলিং মেশিন, ১৬০০টি সাইন পোস্ট এবং একটি স্টিলের ফুটওভারব্রিজ করা হবে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ এমএম