Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে ঝুঁকছে এখন সবাই। পাল্টে দিচ্ছে প্রযুক্তি দুনিয়া। এআই-এর ব্যবহার বর্তমান বিশ্বে দিন দিন বেড়ে চলেছে। কৃষিক্ষেত্রে চিকিৎসা ক্ষেত্রে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটি কেন্দ্রতে আজ এআই এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের ফলে চতুর্থ বিপ্লব শুরু হয়েছে। মানুষের শ্রমশক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন, এআইয়ের কারণে মানুষ কাজ হারাবেন। তবে সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষকে সরিয়ে এআই দিয়ে কাজ করানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সেই পরিস্থিতির জন্য অর্থনীতি এখনো প্রস্তুত নয়।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত ভালো কাজই করুক না কেন, মানুষের চেয়ে বেশি সৃজনশীল হতে পারেনি। আর এটিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মানুষের সক্ষমতার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রেখা টেনে দেয়। এ জন্য এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন কিছু চিন্তা করা এবং ভবিষ্যতে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য সৃজনশীল কর্মীর সন্ধান করে।

এআই বিশ্বে চাকরির নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে-এর ফলে বিশ্বে লাখো মানুষ চাকরি হারাবে চাকরিপ্রার্থী এমন কথা অনেক দিন ধরেই বিশ্লেষকেরা বলে আসছেন। এই উদ্বেগের মধ্যেই এমআইটির গবেষণার কথা জানা গেল।গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যয়বহুল পদ্ধতি হওয়ায় মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ এআইয়ের মাধ্যমে মানুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারবে। এতে বলা হয়, এআই পরিচালিত ভার্চুয়াল রিকগনিশন ডিভাইস ও সিস্টেমগুলো ইনস্টল করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা এত ব্যয়বহুল যে মানুষ আরও অর্থনৈতিকভাবে কাজটি শেষ করতে পারে।

এদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রায় ৪০ শতাংশ চাকরিকে প্রভাবিত করবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।এআইয়ের প্রভাবে বৈশ্বিক বৈষম্য পরিস্থিতি আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টেলিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, এআই ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট সামাজিক সংকট আরও জোরদার হওয়ার আগে এর মোকাবিলায় নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে।

গবেষকরা দেখেছেন, কোনো খুচরা দোকানে একজন কর্মচারীকে দিয়ে মজুত ব্যবস্থাপনা করানোর জন্য যে ব্যয় হয়, তার জায়গায় যদি যন্ত্রকে দিয়ে সেই কাজ করাতে হয়, তাহলে ব্যয় আরও বেশি হবে। অর্থাৎ মানুষকে দিয়ে কাজ করানো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। যন্ত্রকে দিয়ে যদিও এই কাজ করানো সম্ভব, তবে টমসন মনে করেন যে এই মুহূর্তে যন্ত্রের বদলে মানুষকে দিয়েই তা করানো হবে অধিকতর লাভজনক।

আইএমএফের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, চাকরির একটি বৃহৎ অংশকে প্রভাবিত করবে এআই। উন্নত অর্থনীতির দেশে এ প্রভাব ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।আইএমএফ-এর মতে, এআইর কারণে যেমন চাকরি চলে যেতে পারে, আবার কাজকে আরও সহজ করেও তুলতে পারে। উচ্চ আয়ের ও তরুণ কর্মীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মজুরিতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধি দেখতে পেলেও নিম্ন আয়ের ও বয়স্ক কর্মীরা পিছিয়ে পড়তে পারেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এআইয়ের জগতে টিকে থাকতে বহুমাত্রিক দক্ষতা প্রয়োজন। এআই–সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত হতে কোডিং–দক্ষতা বা কম্পিউটার সায়েন্সের জ্ঞানের পাশাপাশি গণিত, পরিসংখ্যানসহ বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন।ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, নতুন প্রযুক্তির কারণে বিশ্বে ১৩ কোটিরও বেশি কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। ডাটা অ্যানালিস্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপার, সোশ্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট এ ধরনের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে।

অন্যদিকে সর্বত্র যখন মিথ্যা, প্রতারণা ও গুজবের ছড়াছড়ি, তখন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই জটিলভাবে চিন্তা করে সঠিকতা খুঁজে বের করার জন্য দক্ষ কর্মী চায়, যারা তথ্যের গুণগত বিষয় যাচাই করে নির্ভুল উৎস বাছাই করার ক্ষমতা রাখে। জটিল চিন্তার দক্ষতা মানে কেবল নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার পরিবর্তে বিশ্বস্ততাকে বোঝায়। আর এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে এখনো আশা করা যায় না।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করা গেলেও, কোনো তথ্য দিয়ে কী নির্দেশ করে তা বিচার করার ক্ষমতা কেবল মানুষেরই আছে। তথ্য বিবেচনা করে কোন সিদ্ধান্তের প্রভাব সমাজের প্রেক্ষাপটে সুফল বয়ে আনবে তা যন্ত্র বা সফটওয়্যার বুঝবে না। নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নৈতিকতার মানদন্ডে কতটুকু ইতিবাচক তা জানার জন্য মানুষের প্রয়োজন অস্বীকার করার উপায় নেই। কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিকল্প এখনো আশা করা যায় না।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ /এমএম