Menu

ব্যতিক্রমী কয়েকটি রোবটের কথা...

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীর সাথে যারা পরিচিত, তাদের কাছে রোবট নতুন কিছু নয়। শুধু তাই নয়, রোবটের দল একটা সময় পৃথিবী দখল করে নেবে, এই কাহিনীও কম নেই কল্পবিজ্ঞানে। কল্পবিজ্ঞানেই কেবল নয়, হলিউডের কল্যাণে রোবট এখন ছড়িয়ে পড়েছে সকলের মাঝেই। ট্রান্সফরমার এবং এই জাতীয় চলচ্চিত্রগুলো যাদের দেখা রয়েছে, তাদের কাছেও পৃথিবী দখল করে নিতে চাওয়া রোবট অপরিচিত নয়। তবে নানান ধরনের রোবট নিয়ে গত শতাব্দীর শেষের দিক থেকেই চলছে গবেষণা। এসব গবেষণার ফল হিসেবে রোবট আর কেবল কল্পবিজ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং কল্পবিজ্ঞানে মানুষের উপকারী দৈনন্দিন কাজের উপযোগী যে রোবটের দেখা মেলে, সেই ধরনের রোবট ইতোমধ্যে বাজারজাত শুরু হয়েছে। এসব রোবট নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে প্রায়ই নানা ধরনের আয়োজন হয়ে থাকে। এই রোবটগুলোর মধ্যে থেকে ভিন্নধর্মী কয়েকটি রোবটের কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়। লিখেছেন মাহবুব শরীফ

ইনোরোবো

ভবিষ্যতের রোবটরাজ্য নিয়ে আমরা যত ভাবনাই করি না কেন, ইনোরোবোর মূল লক্ষ হচ্ছে মূলত সার্ভিস রোবট। অর্থাত্ যেসব রোবট প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজে আমাদের সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে, সেসব রোবট নিয়েই প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে ইনোরোবো। ফ্রান্সের লিঁওতে এবারের তিন দিনের ইনোরোবোতেও তেমনি নানা ধরনের রোবট প্রদর্শিত হয়েছে। চমক জাগানো কয়েকটি রোবটের কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়।

রোবট স্যালামান্ডার

স্যালামান্ডার মূলত গিরগিটি সদৃশ্য একটি উভচর প্রাণী, যে কি না আগুনের মধ্যেও বাস করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এটি আবার উভচরও বটে। ইনোরোবোতে যতগুলো রোবট প্রদর্শিত হয়েছে তার মধ্যে সকলের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে একটি রোবোটিক গিরগিটি বা রোবোটিক স্যালামান্ডার। সুইজারল্যান্ডের জেনেভার নিকটবর্তী লাউসানে শহরের একটি বায়োরোবটিক্স ল্যাবরেটরিতে তৈরি হয়েছে এই স্যালামান্ডার। স্যালামান্ডারের মতোই এই রোবটের চমকজাগানো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মাটির উপরে যেমন হাঁটতে পারে, তেমনি পানিতেও সাঁতার কাটতে পারে। আর এটি দেখতেও ঠিক গিরগিটির মতোই। এই রোবটটি তৈরির পেছনে এর নির্মাতাদের যে মূল ধারণাটি কাজ করেছে, তা হলো প্রাকৃতিক কার্যাবলীকে বুঝতে পারা। এটি নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক কস্টাস কারাকসিলিওটিস বলেন, ‘এই রোবটটি তৈরি করা আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল না। বরং আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি কিছু তৈরি করা যাতে করে আমরা আমাদের নিজেদের নিউরাল নেটওয়ার্ককে সঠিকভাবে বুঝতে পারি।’ এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কারণেই এর সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা তাদের সাথে রেখেছিলেন নিউরোবায়োলজিস্টদের। আর এর ফলে তারা যে রোবট তৈরি করেছেন, তা সম্পূর্ণ জীবন্ত কিছুর মতোই হুবহু নড়াচড়া করতে পারে।

টেলিনয়েড রোবট

পিএইচডি শিক্ষার্থী কোহেই ওবাওয়ার ধারণাটি বেশ ব্যতিক্রম। তিনি টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন এক ধারণা নিয়ে আসতে চান। রোবট ব্যবহার করে তিনি মানুষের উপস্থিতি এবং মানুষের প্রকৃত আচরণকেও স্থানান্তর করতে চান টেলিযোগাযোগ পদ্ধতিতে। এর জন্য তিনি তৈরি করেছেন টেলিনয়েড রোবট। এটি মূলত ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষের রূপে স্কাইপ ডিভাইস। এতে রয়েছে মানুষের মতোই শরীর এবং মুখাবয়ব এবং ভিওআইপি সার্ভিস। সাধারণ ফোনের সব ধরনের সুবিধাই রয়েছে এতে। তবে এর বিশেষত্ব হচ্ছে এটি সেন্সরের মাধ্যমে মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও সনাক্ত করতে পারে এবং তা সেটা মনেও রাখতে পারে। কথা বলার সময়ে মানুষ যেমন অঙ্গভঙ্গি করে থাকে, সেটা মনে রাখে এই টেলিনয়েড। আর এরপর এর মাধ্যমে যখন কেউ কথা বলবে, অপর প্রান্তের টেলিনয়েড কথার উপর ভিত্তি করেই কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মাথা নাড়াতে পারবে হ্যাঁ-সূচক বা না-সূচক ভঙ্গিতে। কিংবা এটি জড়িয়ে ধরতে চাওয়ার মতো আবেগীয় আচরণগুলোও প্রকাশ করতে পারবে। বর্তমান জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলিজেন্ট রোবটিক ল্যাবরেটরিতে প্রকল্প আকারে রয়েছে। এর প্রধান হিসেবে রয়েছেন নিজের চেহারার সাথে মিলিয়ে রোবট তৈরি করে বিখ্যাত হওয়া অধ্যাপক হিরোশি ইশিগুরো। ইতোমধ্যেই টেলিনয়েড সফলভাবে কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেকেই।

রোবট স্মার্টফোন

রোবট ব্যবহারের ইচ্ছা অনেকের থাকলেও খরচের কারণে অনেকেই পিছিয়ে যান। তবে তাদের সহায় হতে পারে নিজেদের স্মার্টফোনগুলো। স্মার্টফোনের মতো ডিভাইসগুলোকে অনেকেই রোবট হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করেছেন এবং এর ফলও মিলেছে। এর আগে টেড শোতে আইফোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রোবট প্রদর্শিত হয়েছে। ইনোরোবোতেও এমন বেশকিছু স্মার্টবট প্রদর্শিত হয়েছে। আইওস-এর পাশাপাশি অ্যানড্রয়েড এবং উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোনেও এগুলো কাজ করতে পারে। ওভারড্রাইভ রোবোটিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এই স্মার্টবট নিয়ে। এরাবটের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনটি মূলতই কাজ করে রোবটের মস্তিষ্ক বা পালিচালক শক্তি হিসেবে। স্মার্টবটগুলো দিয়ে স্মার্টফোনের সাহায্যে ছবি তোলা, গান শোনানো, ভিডিও কনফারেন্সিং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করাসহ বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব। তারা জানিয়েছে, আসছে এপ্রিলে ১৬০ ইউরোতে এ ধরনের স্মার্টবট বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১২টি অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এটি আসবে বাজারে। ইনোরোবোতে এর প্রোটোটাইপ দেখে এখন অনেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন স্মার্টবটের।

বিভিন্ন সেবায় রোবট

কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীতে দেখা যায়, ভবিষ্যতের দুনিয়ায় শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায়, দোকানে সব জায়গাতেই থাকবে রোবট। মানুষের সব ধরনের চাহিদা পূরণের সদা তত্পর থাকবে তারা। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের কিছু জায়গায় দেখা মিলবে এমন রোবটের, যারা আপনাকে সহায়তা করবে রাস্তা চিনতে কিংবা শপিং মলে কেনাকাটায়। চীন, ফ্রান্স, ব্রাজিল আর জাপানেও পরীক্ষামূলকভাবে ইনোরোবোতেও। এর একটির নাম গিলবার্তো। সুইজারল্যান্ডের ব্লকটিক ফার্মে তৈরি হওয়া এই রোবট কনফারেন্সের সময় বিভিন্ন ধরনের তথ্য ১০টি ভাষায় প্রদান করতে পারে। সুইজারল্যান্ডের রোবটিক মিউজিয়ামে এর গাইডের কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। ব্লুবটিক অবশ্য নেসডট নামে কফি তৈরিতে সক্ষম একটি রোবটও তৈরি করেছে। নেসপ্রসো নামক কফি উত্পাদনাকারী একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে এটি কাজ করে থাকে।

এমন আরও নানা ধরনের রোবটের উপস্থিতিতে ইনোরোবো ছিল মুখর। ভবিষ্যতে হয়তো কেবল প্রদর্শনীতেই নয়, দৈনন্দিন জীবনেও ছড়িয়ে পড়বে এরা। আর সেই সময়ের অপেক্ষাতেই রয়েছেন প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ।

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২২ আগস্ট ২০১৯ / এমএম