Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ পশ্চিমে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। যুদ্ধের পেছনে যে জ্বালানি দিচ্ছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ কথা কারো অজানা নয়। যুদ্ধের প্রভাবে শীত প্রধান ইউরোপ কতটা ভোগান্তিতে তার চিত্র চোখ কান কিছুটা খোলা রাখলেই আজকাল সহজে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর প্রভাব এবার পড়তে শুরু করেছে মার্কিন মুলুকেও। এরই মধ্যে দেশটিতে রান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাস সাশ্রয়ে দেশটিতে ব্যবহৃত গ্যাসের চুলার ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন (সিপিএসসি)। গত ৯ জানুয়ারি ফেডারেল সংস্থাটির কমিশনার রিচার্ড ট্রুমকা জুনিয়র ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছিলেন। তিনি সেগুলোকে ‘হিডেন হেজার্ড’ হিসেবে বর্ণনা করছেন৷তবে এ ধরনের পদক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে আসায় বিষয়টি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে অনেক রক্ষণশীলদের মধ্যে। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার এর জন্য দোষারোপ করছেন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের ওপর।

টেক্সাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান রনি জ্যাকসন ইতোমধ্যে খোঁচা দিয়ে টুইটারে মন্তব্যও করে বসেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি হোয়াইট হাউসের পাগলরা আমার চুলার জন্য আসে, তারা আমার ঠান্ডা মৃত হাত থেকে তা ছিনিয়ে নিতে পারে। এসে নিয়ে যাও!’ এখানেই শেষ নয়, এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরাও। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একজন সিনেটর জো মানচিন এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিপর্যয়ের রেসিপি’ বলে অভিহিত করেছেন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, গ্যাসের চুলা কেন আমেরিকার সংস্কৃতি যুদ্ধের অংশ হয়ে উঠেছে এবং সেগুলি কি আসলেই নিষিদ্ধ করা হতে পারে?প্রায় ৩৮ শতাংশ আমেরিকান পরিবারের গ্যাসের চুলা রয়েছে। যদিও এই সংখ্যা একেক রাজ্যে একেক রকম। প্রবক্তাদের মতে, এগুলি বৈদ্যুতিক বিকল্পগুলির চেয়ে সস্তা এবং আরও কার্যকরী। এমনকি গ্যাসের চুলায় করা রান্না খাবারও খেতে ভাল স্বাদের। গ্যাস শিল্পেরও ভালো জনসংযোগ রয়েছে রান্নার ক্ষেত্রে।

১৯৩০ সালের দিকে ‘গ্যাস দিয়ে রান্না’ ছিল একটি বিজ্ঞাপনের স্লোগান যেটা আমেরিকানদের মগজে বেশ ভালভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কুকিং উইথ গ্যাস.ওআরজি নামের একটি ট্রেড গ্রুপ ওয়েবসাইটে আমেরিকান গ্যাস অ্যাসোসিয়েশন রান্নার বিভিন্ন রেসিপি প্রকাশ করে। তাদের স্পনসর করা সোশাল মিডিয়া পোস্টে প্রভাবশালীরা তাদের গ্যাসের চুলা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।

কিন্তু গ্যাসের চুলার যন্ত্রপাতি নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কণা পদার্থ এবং অন্যান্য দূষক নির্গত করে। যার ফলে হাঁপানিসহ পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। ভাল বায়ুচলাচল দিয়ে বিপদগুলি প্রশমিত করা যেতে পারে, তবুও অভ্যন্তরীণ দূষণ খুব বেশি নিয়ন্ত্রিত হয় না। জ্বলন্ত গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন সহ গ্রিনহাউস গ্যাসও নির্গত করে।

দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় পাঁচ দশকের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে গ্যাসের চুলা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। সাম্প্রতিক একটি সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, মার্কিন বাড়িতে গ্যাসের চুলা প্রায় ১৩ শতাংশ শৈশব হাঁপানির জন্য দায়ী হতে পারে। গ্যাসের চুলাগুলি জীবাশ্ম জ্বালানী দ্বারা চালিত হওয়ায় পরিবেশের জন্যও খারাপ।

কেউ কেউ বলছেন, গ্যাসের চুলার রাজনীতি মূলত রক্ষণশীল পুরুষদের তৈরি করা ইন্ধন। এর মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটদের পাঞ্চ করার সুযোগ ছিল এবং রিপাবলিকানরাও সেই সুযোগ নিতে একেবারে লাইন ধরে ছিল।

তবে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসের অনলাইন সহকারী ক্রিস্টিনা পুশা বলেছেন, ‘বাইডেন সাধারণ মানুষের জন্য গ্যাসের চুলা নিষিদ্ধ করবে’ এই দাবিটি সত্য নয়। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি গ্যাসের চুলা নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন করেন না এবং কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশন, যা স্বাধীন, গ্যাসের চুলা নিষিদ্ধ করছে না।’

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ /এমএম