Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ মানসিক প্রস্তুতি থাকলেও করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের কারণে শেষ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান সাধারণ ছুটি বাড়াতে হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে এই সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে এবং টেলিভিশনসহ দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে লেখাপড়া চলবে। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা ভূমিকা রাখবেন। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ।

এদিকে শিক্ষার পাশাপাশি এবার ছাত্রছাত্রীদের মনস্তাত্ত্বিক সুরক্ষারও পদক্ষেপ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষকের অধীনে ছাত্রছাত্রীদের ভাগ করে দেওয়া হবে। এরপর প্রত্যেক শিক্ষক তাদের অধীন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখবেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত সাপেক্ষে তাদের শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ নেবেন। দু-তিন দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ঘরবন্দি থাকায় বা স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় আসতে না পারায় শিক্ষার্থীর মধ্যে যাতে কোনো অভাববোধ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য পরিস্থিতি উপযোগী ‘কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটি’র (সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ সহ-পাঠ্যক্রম) মধ্যে তাদের রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষকরা তাদের ছাত্রছাত্রীদের নিজের সংস্পর্শে রাখবেন। বাবা-মাসহ অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। যেখানে অনলাইনে ক্লাস হয়, সেখানে চিত্রাঙ্কন, বিভিন্ন ধরনের সংগীত, আবৃত্তিসহ নানান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধীনে নিয়ে আসবেন। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে কীভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সুস্থ ও সবল রাখা যায়, সে দিকগুলো বিবেচনা করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মোট কথা ছাত্রছাত্রীদের একটা ‘টিউটরিং’য়ের (নিবিড় একাডেমিক তত্ত্বাবধান) মধ্যে নিয়ে আসা হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু আছে। এ ব্যাপারে এর আগে এক দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। এখন আবার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি চলছে। এ কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ৩ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থী মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে। যদিও শুরু থেকে দূরশিক্ষণ ও পরে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সরাসরি মাধ্যমের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে শিখন ঘাটতিতে পড়েছে।

বেসরকারি গবেষণা অনুযায়ী, এই ছুটির কারণে প্রাথমিকের ১৯ আর মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখনঘাটতির ঝুঁকিতে আছে। যে কারণে ক্ষতি পোষাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে শিক্ষণ চালু থাকলেও শহর-গ্রামভেদে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে বলেও বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি ঘরবন্দি শিশুদের নানান মনদৈহিক সমস্যাও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছুটি বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য উল্লিখিত পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।

আগের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ছিল। গত ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিন সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেদিন তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে সিদ্ধান্ত ভিন্ন হতে পারে। জানা গেছে, সংবাদ সম্মেলনের দিন বা ২৬ মে করোনার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। কিন্তু পরে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা শনিবার পরীক্ষার বিপরীতে হার দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইনও এমন। এছাড়া করোনাসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির বিষয়টি নির্ধারিত হয়ে থাকে। কমিটি থেকেও কোনো ইতিবাচক মতামত মেলেনি। যে কারণে ছুটি বাড়ানো হয়েছে।

শনিবার এ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে আংশিকভাবে কঠোর লকডাউন চলছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছুটি চলাকালে নিজেদের ও অন্যদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করবে। পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা ও অনুশাসনগুলো শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাসস্থানে অবস্থানের বিষয়টি অভিভাবকরা নিশ্চিত করবেন এবং স্থানীয় প্রশাসন তা নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীরা যাতে বাসস্থানে অবস্থান করে নিজ নিজ পাঠ্যবই অধ্যয়ন করে সে বিষয়টি অভিভাবকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করবেন।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৩ জুন ২০২১ /এমএম