Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  শীতের বাজারে গাঢ় গোলাপি কিংবা লালচে রঙের বিট রুটে ছেয়ে গেছে বাজার। এই রঙিন সবজিটির সমারোহ থাকলেও অনেকেই এর সঙ্গে পরিচিত হতে পারেননি সেইভাবে। তবে যারা ডায়েট সচেতন কিংবা রূপ সচেতন মানুষ বা স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে কিছুটা পরিচিত হচ্ছে এই রঙিন সবজিটি। এই সবজিটি পুষ্টিগুণ এবং ভেষজ ঔষধি গুণ সম্পন্ন বলে একে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে পুষ্টিবিদের মতে।

আসুন এখন জেনে নিই বিট রুটের কিছু পুষ্টিকর উপকারী ভূমিকার কথা:

*যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন কিংবা যারা দীর্ঘদিন এনিমিয়াতে ভুগছেন তাদের খাদ্য তালিকায় বিট রুট রাখতে পারেন অনায়াসেই। কারণ এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন এবং ফলিসন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

*উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বিটর রুট অনেক উপকারী একটি খাদ্য উপাদান। কারণ এতে রয়েছে নাইট্রেটস, যা রক্তনালী প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এই সবজিটি।

*বিট রুট ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ বিটরুটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, যা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিটরুট আমাদের ক্ষুধা মন্দা তৈরি করে এবং এর ফলে দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে অনায়াসে।

*বিট রুট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজমে সহায়তা করে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকার জন্য এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে বিভিন্ন ধরনের হজমের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

*বিট রুট রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে।

* বিট রুটে বিটেইন থাকায় লিভারে চর্বি জমতে দেয় না, যার ফলে সহজেই শরীরকে ডি টক্সিফাই করে।

*বিটে থাকা লুটেইন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা চোখের সমস্যার ঝুঁকি কমায়। এতে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল যা চোখের স্বাস্থ্য এবং চারপাশের স্নায়ু টিসুগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করে।

*বিট রুট মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

*বিট রুটে আছে টালাইন নামক প্রদাহ বিরোধী যৌগ, যা প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে।

*বিট রুট অ্যান্টি এজিং হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ বয়স ধরে রাখতে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে বিটরুট। কারণ বিট রুটে রয়েছে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান যা আমাদের ত্বকের তারুণ্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ত্বকে বার্ধক্যজনিত যে রিংকেল পরে তার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।

*বিট রুট অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

কিভাবে খাবেন?

বিট রুট কাঁচা কিংবা রান্না করে- দুভাবেই খাওয়া যায়। বিট রুট কাঁচা সালাদে কিংবা জুস করে অথবা সবজিতে বিট রুট, গাজর, ফুলকপি, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি মিলিয়ে মিক্সড সবজি রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

এছাড়া বাচ্চাদের জন্য সুদি কিংবা মিল্কশেক করেও দেওয়া যেতে পারে এই বিট রুট দিয়ে। অথবা অনেকে বাসায় একটু মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করেন, সে ক্ষেত্রে বিট রুটের হালুয়া কিংবা কোনো ডেজার্ট তৈরি করেও কিন্তু খাওয়া যেতে পারে।

বিটরুট কারা খাবেন না বা কারা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে খেতে পারেন?

একটা খাবার যতই ভালো হোক না কেন তা যদি অপরিমিতভাবে বা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়, তার কিন্তু বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে শারীরিক জটিলতা হিসাবে। তাই বিট রুট খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

*যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের প্রতিদিন বিট রুট খাওয়া যাবে না। কারণ বিট রুটের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স অত্যন্ত বেশি, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে খুব দ্রুত।

*যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বিট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা সিকেডি পেসেন্ট বা ক্রিয়েটিনিন বেশি তাদের ক্ষেত্রেও বিট রুট না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

*অনেকের বিট রুটে এলার্জি হতে পারে, যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি কিংবা জ্বালাপোড়া হতে পারে। এলার্জির সমস্যা থাকলে বিট রুট না খাওয়াই ভালো।

পরিশেষে বলা যায়, সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে চাইলে যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী বিট রুট গ্রহণ করবেন।

লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১৪ অক্টোবর  ২০২৫ /এমএম


Array