প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ১৯৬৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্ষমার আহ্বান সত্ত্বেও ইলি কোহেন নামের এক গুপ্তচরকে সিরিয়ার মারজেহ স্কয়ারে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। ৬০ বছর পর এসে সেই মোসাদ সদস্যের দেহ ফেরত চাচ্ছে ইসরাইল।
গুপ্তচর ইলি কোহেন এবং তার মিশন
১৯২৪ সালে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইলি কোহেন। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তিনি পরিবারের সঙ্গে ইসরাইলে অভিবাসন করেন। ইলি কোহেন পরে ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে কাজ শুরু করেন। পরে ১৯৬০-এর দশকে তাকে নিজেদের সদস্য করে নেয় মোসাদ।
মিশরীয় আরবী, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষার দক্ষতার জন্য কোহেনকে একটি জটিল ছদ্মপরিচয় দেওয়া হয়। সিরিয়ায় তিনি ‘কামেল আমিন থাবেত’ ছদ্মনামে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হন। ওই সময় তিনি আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে আরব ও সিরিয়ান সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীর সংযোগ গড়ে তোলেন।
১৯৬২ সালে কোহেন দামেস্কে যান। সেখানে তিনি সিরিয়ান সমাজের উঁচুস্তরে প্রবেশ করেন। তার আয়োজিত বিলাসবহুল পার্টিতে সিরিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অংশ নিতেন। এখান থেকেই তিনি গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন। যা পরবর্তী সময়ে ইসরাইলের গোলান মালভূমি দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ধরা পড়া এবং মৃত্যুদণ্ড
কোহেনের গুপ্তচরবৃত্তি ১৯৬৫ সালে হঠাৎ করে প্রকাশ পায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় সিরিয়ান গোয়েন্দারা তার ইসরাইলে পাঠানো গোপন রেডিও সংকেত শনাক্ত করে। এর প্রেক্ষিতে ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।পরে তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ১৯৬৫ সালের ১৮মে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়।
মরদেহ ফেরত আনার প্রচেষ্টা
ইলি কোহেনের মৃত্যুদণ্ডের পর তার লাশের অবস্থান একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ইসরাইলের অনুরোধ ও বন্দি বিনিময়ের প্রস্তাব সিরিয়া বারবার প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। এমনকি সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ ইসরাইলি গুপ্তচরের লাশ একাধিকবার সরিয়েছে বলেও জানা যায়।এর মধ্যেও ২০১৮ সালে কোহেনের একটি হাতঘড়ি উদ্ধার করে মোসাদ। যা তার স্মরণে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই ধরা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
সিরিয়ায় সম্প্রতি আসাদ সরকারের পতনের ফলে নতুন আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইলি কর্মকর্তারা, বিশেষত মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়া সিরিয়ার সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। এসব আলোচনা রাশিয়ার মধ্যস্থতায় পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।কোহেনকে মূলত ইসরাইলের অন্যতম নামকরা গুপ্তচর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার দেওয়া তথ্যেই ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয় এবং ইসরাইল জয়ী হয়। সূত্র: এনডিটিভি
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ /এমএম