Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: পার্ক সেউং-হোয়ান (ছদ্ম নাম)। জš§গতভাবে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক তিনি। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কিম সরকারের দমন পীড়ন থেকে বাঁচতে ২০১২ সালে পালিয়ে যান দক্ষিণ কোরিয়ায়।দূরে থাকলেও পরিবারকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন পার্ক। প্রতি কিস্তিতে দুই থেকে তিন মিলিয়ন ওন পাঠাতেন। যা দিয়ে তার পরিবার এক বছর সাদা ভাত খেতে পারত। তবে সেই টাকা পাঠাতেও বেশ কাঠখড়া পোহাতে হয়েছে তাকে। চোরা পথে বহু ধাপ অতিক্রম করে সিউল থেকে পিয়ংইয়ংয়ে পৌঁছে পার্কের পাঠানো অর্থ। আবার কমিশন ও ঘুষের কারণে পরিবারের হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় অর্ধেকে ঠেকে সেই অর্থ। দুই কোরিয়ার মধ্যে বৈধ ব্যবস্থা না থাকায় পরিবার বাঁচাতে চোরা পথেই টাকা পাঠাচ্ছেন উত্তর কোরীয়রা। গার্ডিয়ান।

বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে অর্থ পৌঁছে যায় পরিবারের কাছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা পলাতক উত্তর কোরীয়রা টাকা দেন ব্রোকারদের হাতে। এই অর্থ চীনা মুদ্রায় রূপান্তর করে ব্রোকাররা। এরপর মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে অর্থ যায় উত্তর কোরিয়ায়। সেখানকার ব্রোকাররা সেই অর্থ তুলে দেন পরিবারের হাতে।যোগাযোগ হয় সীমান্তের কাছাকাছি কার্যকর চীনা ফোনে। টাকা পেয়েছে কি না তা নিশ্চত করতে অনেক সময় ভিডিও পাঠায় পরিবার। তবে কমিশন ও ঘুসের কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থ মাঝপথেই হারিয়ে যায়। পরিবারের কাছে পৌঁছে পাঠানো অর্থের মাত্র ৬০ শতাংশ। সম্প্রতি সীমান্তে অভিযান জোরদার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের অভিযানে ভেঙে পড়ছে এ গোপন নেটওয়ার্কটি।

মানবাধিকার ডেটাবেস সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে ৪০ শতাংশ উত্তর কোরীয় শরণার্থী অন্তত একবার পরিবারের কাছে অর্থ পাঠিয়েছেন। গত দু’বছর থেকে পরিবারের কাছে নিয়মিত টাকা পাঠাতে পারছেন পার্কও।২০২৩ সালে গোপন এ নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দেশটির পুলিশ। প্রথমে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত থাকলেও কোনো গুপ্তচরবৃত্তির প্রমাণ না পেয়ে মামলাগুলো ঘুরে দাঁড়ায় আর্থিক অপরাধে। এরইমধ্যে অন্তত ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনজন এখনও বিচারাধীন।

ফলে নেটওয়ার্কের ৭০ শতাংশ কার্যত ভেঙে গেছে। নতুন করে এই নেটওয়ার্ক আবার গড়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের একজন। এই সুযোগে দেশটিতে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সংকট বুঝতে পেরে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এসেছেন কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি। ক্ষুদ্র অঙ্কের রেমিট্যান্স বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টির সংসদ সদস্য ইহ্ন ইয়ো-হান।

এদিকে নজরদারি আরও কঠোর করেছে উত্তর কোরিয়াও। দেশে সন্দেহজনক কাউকে দেখলে রিপোর্ট করতে এবং আত্মীয়-পরিজনের প্রতি সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে গত জুলাইয়ে উত্তর কোরিয়ার হিয়েসান শহরে এক রেমিট্যান্স ব্রোকারকে গ্রেফতার করেছে রাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ।তিনি দক্ষিণ হ্যামগিয়ং প্রদেশের কওন কাউন্টিতে পলাতক শরণার্থীর পরিবারকে অর্থ পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। এরপর নজরদারি আরও জোরদার করা হয়।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১৬ সেপ্টেম্বর  ২০২৫ /এমএম


Array