বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের পরিচয়পত্র পেশ করলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের বাকিংহাম প্যালেসে তিনি নিজের পরিচয়পত্র পেশ করেন। এ সময়ে তার সঙ্গে তার স্বামী তৌহিদুল আই চৌধুরী এবং হাই কমিশনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাণীর প্রতিনিধি ডিপ্লোমেটিক কর্পের মার্শাল অ্যালিস্টার হ্যারিসন কুইন্স গেইটস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে আসেন এবং হাইকমিশনার, তার স্বামী এবং হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ির বহরে করে বার্কিংহাম প্যালেসে নিয়ে যান। এ সময়ে প্যালেসের সামনে শত শত দর্শক রাজকীয় বহরের প্রতি হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়।
পারমানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি এবং ব্রিটিশ ডিপ্লোমেটিক কর্পের প্রধান স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড, ডিপ্লোমেটিক কর্পের এ্যাসিসটেন্ট মার্শাল এবিগেইল বয়েল এবং রাণীর একজন প্রতিনিধি প্যালেসের প্রধান ফটকে হাইকমিশনারকে অভ্যর্থনা জানান। প্যালেসের নির্ধারিত কক্ষে প্রবেশের পর মার্শাল হাইকমিশনার ও তার স্বামীকে রাণীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর হাইকমিশনার তার পরিচয়পত্র রাণীর নিকট হস্তান্তর করেন। এ সময় রাণীকে হাইকমিশনার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা এবং ১৯৮৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে রাণীর সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে তিনি এক বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার স্থান দখল করে আছেন।
হাইকমিশনার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়ে ব্রিটিশ সরকার ও জনগনের সমর্থন এবং ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়ে লন্ডনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার কথাও স্মরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের দুইটি বিশেষ বনকে ‘কুইন্স কমনওয়েলথ ক্যানোপি’ এর অন্তর্ভূক্ত করার অনুরোধ জানান, যাতে এ বনভূমি দু‘টি কমনওয়েলথের অন্যান্য দেশের কেনোপিভূক্ত বনগুলোর মতই সুরক্ষিত হতে পারে।
ব্রিটেনের রাণী হাইকমিশনারকে যুক্তরাজ্যে সাদর স্বাগতম জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পরে হাইকমিশনার রাণীর সঙ্গে হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সামরিক উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ. কে. এম. আমিনুল হক, মিনিস্টার (কনস্যুলার) মো. লুৎফুল হাসান, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এস. এম. জাকারিয়া হক এবং প্রথম সচিব মো. শফিউল আলম।
পরিচয়পত্র পেশের পর ডিপ্লোমেটিক কর্পের এ্যাসিসটেন্ট মার্শাল এবিগেইল বয়েল হাইকমিশনার ও তার সংগীদের রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ির বহরে করে বাকিংহাম প্যালেস থেকে সেন্টস জেমস কোর্টে (তাজ হোটেল) নিয়ে যান। সেখানে পরিচয়পত্র প্রদান পরবর্তী এক অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে, আবদুল মোমেন, যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডস ও হাউজ অব কমনওয়েলথ সিনিয়র সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ, ব্রিটিশ ফরেন এবং কমনওয়েলথ অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবি এবং বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত’। সাইদা মুনা তাসনীমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হাই কমিশন যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় ও গভীর করবে বলে তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ডিপ্লোমেটিক কর্পের মার্শাল বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ব্রিটেন সবসময় পাশে থাকার অংগীকার ব্যক্ত করেন। তিনি তার বক্তব্যে ব্রিটেনের রাণী, ব্রিটিশ সরকার ও জনগণ এবং বাংলাদেশি-ব্রিটিশ কমিউনিটিকে বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার ব্যাপারে সবসময়ে আন্তরিক এবং সচেষ্ট থাকবেন বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ৪ মে ২০১৯/ এমএম